আমাদেরকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে: জবি উপাচার্য

=
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, প্রতিবেদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৮ টা থেকে দিনব্যাপী চলে নানা আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় পূজার আয়োজন করা হয়।

এবার বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৭টি মন্ডপে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ পূজামন্ডপসমূহ পরিদর্শন করেন। এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রক্টর, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সকলকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা ক্যাম্পাসকে অসাম্প্রদায়িক করে তুলবো। সবার জন্য উন্মুক্ত। ক্যাম্পাসে সারাবছর সকল ধরণের সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে সকাল ১০ টায় পূজা শুরু হয়। এসময় প্রতিমা স্থাপন, বাণী আর্চনা ও পুস্পাঞ্জলি প্রদান করা হয়। এছাড়া ধর্মালোচনা শেষে দুপুরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

সকাল থেকেই পূজা দেখতে ভিড় করে দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। পূজা উপলক্ষে ক্যাম্পাসকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে রঙ্গিন করে আঁকা হয়েছে আলপনা।

এদিন উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই মন্ডপগুলোতে পূজা দেখতে ভিড় করে দর্শনার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস।

পূজা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ঢাকের তালে আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। মণ্ডপগুলোতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা বিদ্যার দেবী সরস্বতীর সামনে প্রার্থনা করছে। অনেকে প্রসাদ গ্রহণ করছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম শিক্ষার্থীদের তাদের হিন্দু বন্ধুদের সাথে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়।

সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা প্রার্থনা, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমন্বয়ে জ্ঞাননির্ভর এক অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠা করাই এ পূজার লক্ষ্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে সকল অন্ধকার দূরীভূত হয়ে আলোর পথ প্রসারিত হবে।

গনিত বিভাগের মণ্ডপে পূজা করতে আসা শিক্ষার্থী জয়ন্তী রাণী রায় বলেন, ‘আমাদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী। সকাল থেকেই অনেক আনন্দ লাগছে আর ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আমাদের সকলের বিদ্যা এবং জ্ঞান যেন আরও বৃদ্ধি পায় দেবীর কাছে সেটাই প্রার্থনা করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সদস্য সচিব ড. পরিমল বালা বলেন, ‘সরস্বতী পূজার মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোতে যাত্রার প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সারা বিশ্বের অন্ধকার দূরীভূত হবে এবং আলোকিত মানুষ হিসেবে গিড়ে উঠার জন্য প্রার্থনা করা হয় এদিন। আমার আড়ম্বরপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’

দিনব্যাপী এ আয়োজনে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘সুন্দরভাবে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তায় জন্য প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ও পুলিশ বাহিনী কাজ করছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত সরস্বতী পূজায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। গত বছর একটি মাত্র পূজামন্ডপে কেন্দ্রীয়ভাবে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রায় তিন বছর পর আবারও বড় পরিসরে উদযাপিত হয়েছে সরস্বতী পূজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights