আমিরাতে এক বছরে ৭০৫ বাংলাদেশির মৃত্যু

জাসেদুল ইসলাম, আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাতে দিনদিন বাড়ছে প্রবাসীদের হৃদরোগে মৃত্যু ও আত্মহত্যা প্রবণতা। আর্থিক সংকট ও পারিবারিক কলহের কারণে অল্পতেই আত্মহত্যা করছেন অনেক প্রবাসী। অনেকের ঘরে ফিরতে না পারার কষ্ট, অর্থকষ্ট, কর্মস্থলের ছুটি না পাওয়া এবং পারিবারিক নানা চাপে মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

গত এক বছরে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে মারা গেছেন ৭০৫ বাংলাদেশি। এর মধ্যে হৃদরোগেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৬৪ জনের। এ ছাড়া দুবাইয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৮ জন। তবে আবুধাবিতে আত্মহত্যা করা প্রবাসীর সংখ্যা নিশ্চিত করেতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

আরব আমিরাতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও দুবাই কনস্যুলেটের তথ্যমতে, আবুধাবি অঞ্চলে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হৃদরোগ মৃত্যু হয়েছে ১৩৫ জনের। এ ছাড়া কর্মস্থলে ৩, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ এবং হত্যা ও আত্মহত্যাজনিত কারণে মারা গেছে ৫৪ জন। একই সময়ে দুবাই ও উত্তর আমিরাতে মারা গেছেন ৪৭৭ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে শুধু হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩২৯ জন। এ ছাড়া স্বাভাবিক মৃত্যু ৬৮, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৫১, করোনায় ৭, আত্মহত্যায় ১৮ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ৪ জন।
দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তথ্যমতে, দুবাই ও উত্তর আমিরাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অধিকাংশ প্রবাসীর বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর। আবার আত্মহত্যায় মৃত প্রবাসীদের বয়সও প্রায় একই। এমন মৃত্যুতে শঙ্কিত দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট।

আজমান আল জার্ফ মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. তানিয়া নাজনীন বলেন, মানসিক দুশ্চিন্তা, খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রবাসীদের অস্বাভাবিক এমন মৃত্যুর অন্যতম কারণ। অধিকাংশ প্রবাসী পরিবার ছাড়া থাকতে গিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। এতে করে তাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। বেতনের তুলনায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় কেউ কেউ চিকিৎসাকে অতিরিক্ত খরচ মনে করেন। অধিকাংশ প্রবাসী যে কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে অনীহা দেখান। স্বাস্থ্য সচেতন না হওয়ায় কারও কারও মৃত্যু ঘটে।

দুবাই কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন বলেন, এই বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক। প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কাউন্সিলিংয়ের কথাও বলছেন এই কর্মকর্তা। তিনি জানান, পৃথিবীর কোথাও প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে এই বিষয়ে দুবাই থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটাতে বিশেষ একটি পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights