‘আলহামদু লিল্লাহ’ কখন বলব, কেন বলব

মুফতি আতাউর রহমান

বিসমিল্লাহ পাঠের পর পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াত ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’। অর্থাৎ আলহামদু লিল্লাহ বাক্যের মাধ্যমেই মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের সূচনা হয়েছে। যার অর্থ সব প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য। যাকে ‘হামদ’ শব্দ দ্বারাও ব্যক্ত করা হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আলোচনা, বক্তৃতা ও চিঠিপত্রের সূচনা করতেন পবিত্র এই বাক্যের মাধ্যমে। সুতরাং মুমিনের দৈনন্দিন জীবনে আলহামদু লিল্লাহ পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

হামদ কাকে বলে
হামদ তথা আলহামদু লিল্লাহ বাক্যের মাধ্যমে মুমিন মূলত মহান আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ভাষাবিদদের মতে, ‘হামদ হলো অর্জিত গুণের জন্য মৌখিকভাবে প্রশংসা করা।

চাই তা অনুগ্রহের বিপরীতে হোক বা না হোক।’
(শরহুল আকিদাতিল ওয়াসিতাহ, পৃষ্ঠা-৭)

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘হামদ হলো সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে প্রশংসাকারীর প্রশংসা করা।’

(বাদায়িউল ফাওয়াইদ : ২/৫৩৬)

আলহামদু লিল্লাহ কেন বলব

একাধিক হাদিস দ্বারা ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বাক্যের মর্যাদা ও সম্মান প্রমাণিত। যার কয়েকটি হলো—

১. আল্লাহর প্রিয় বাক্য : মানুষের কথার ভেতর আলহামদু লিল্লাহ আল্লাহর প্রিয় একটি বাক্য।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয় বাক্য চারটি : সুবনাল্লাহ (মহান আল্লাহ পূতঃপবিত্র), আলহামদু লিল্লাহ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য), লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই) এবং আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)। এগুলোর যেকোনো শব্দ দ্বারা তুমি আরম্ভ করো, তাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৪৯৪)

২. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় আমল : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি বলি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ পড়া আমার কাছে বেশি প্রিয় সে সব বিষয়ের চেয়ে, যার ওপর সূর্য উদিত হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭৪০)

৩. রহমত ও বৃষ্টি লাভের মাধ্যম : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার মানুষ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অনাবৃষ্টির অভিযোগ করল। তখন তিনি ঈদগাহে মিম্বার স্থাপনের নির্দেশ দেন।

অতঃপর মানুষের উদ্দেশে কথা বলেন এবং বৃষ্টি প্রার্থনার দীর্ঘ দোয়া শেখান। যে দোয়ার সূচনা হয়েছে আলহামদু লিল্লাহ বাক্য দ্বারা। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১১৭৩)

৪. উত্তম দোয়া : জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অতি উত্তম জিকির এবং ‘আলহামদু লিল্লাহ’ অধিক উত্তম দোয়া। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৩)

৫. পাপ মোচনকারী : আলহামদু লিল্লাহ পাঠে বান্দার পাপ মোচন করা হয়। আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, তুমি অবশ্যই ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ পড়তে থাকো। কেননা তা গুনাহসমূহ ঝরিয়ে দেয়, যেমন গাছ তার পাতা ঝরিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮১৩)

আলহামদু লিল্লাহ কখন বলব

মুমিন প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে এবং শেষে আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করবে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলহামদু লিল্লাহ পাঠের কয়েকটি স্থান উল্লেখ করা হলো—

১. ভালো কাজের শুরুতে : যেকোনো ভালো কাজের শুরুতে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পাঠ করলে তা বরকতময় হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা হামদের মাধ্যমে শুরু হয়নি, তা অপূর্ণ।’

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৯৪)

২. ভালো কিছু অর্জন করলে : আনন্দদায়ক কোনো কিছু অর্জন করলে মুমিন কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আলহামদু লিল্লাহ পড়বে। যেমন ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৯)

৩. বিপদ মুক্তির পর : বিপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পেলে মুমিন আল্লাহর প্রশংসাস্বরূপ আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তারা বলবে, সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করেছেন। আমাদের প্রতিপালক ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’

(সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৪)

৪. হাঁচি এলে : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দেয়, তখন সে যেন আলহামদু লিল্লাহ বলে।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২২৮)

৫. প্রত্যেক নামাজের পর : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার—এভাবে ৯৯ বার হওয়ার পর শততম বার পূর্ণ করতে বলবে—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদির’। তার গুনাহগুলো সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২৩৯)

এ ছাড়া হাদিসে পানাহারের পর, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর, রাতে ঘুম ভেঙে গেলে, কাপড় পরিধান করলে, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখলে ও মসজিদে প্রবেশের সময় আলহামদু লিল্লাহ পড়তে বলা হয়েছে।

আল্লাহ সবাইকে তাঁর সপ্রশংস কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাওফিক দিন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights