ওয়াসায় আটকা সিলেটবাসীর পানি
শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট
সিলেট নগরীতে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৪২টি। এর মধ্যে পুরানো ২৭টি এবং বছর তিনেক আগে আরও ১৫টি ওয়ার্ড করা হয়। পুরানো ২৭টি ওয়ার্ডের ২৪টিতে পানি সরবরাহ করা হলেও তা চাহিদার অর্ধেকেরও কম। নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে এখনো পানির লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দক্ষিণ সুরমার তিনটি ওয়ার্ডে লাইন স্থাপন করা হলেও এখনো পানি সরবরাহ সম্ভব হয়নি।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্র জানায়, ২৭ ওয়ার্ড মিলে দৈনিক সুপেয় পানির চাহিদা রয়েছে সাড়ে ১০ কোটি লিটার। আর বর্তমানে চালু থাকা ২৪ ওয়ার্ডে প্রয়োজন সাড়ে ৮ কোটি লিটার। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে দৈনিক সরবরাহ হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি লিটার।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সিলেট নগরীর চাহিদার অর্ধেক সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন। এর কারণ হিসেবে বলছে, নগরীতে ওয়াসার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় পানিসংকট নিরসনে নগরভবনের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাচ্ছে না। ওয়াসার কারণে সিটি করপোরেশনের গৃহীত ‘চেঙের খাল ওয়াটার প্ল্যান্ট’ প্রকল্পটিও ঝুলে গেছে। আগামী রমজান মাসে পানিসংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছে নগরভবন কর্তৃপক্ষ।
সিসিক সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে নগরীর কুশিঘাটে দুটি প্ল্যান্টের মাধ্যমে সুরমা নদীর পানি পরিশোধনের মাধ্যমে নগরীতে সরবরাহ করা হয়। ওই দুটি প্ল্যান্ট ২৪ ঘণ্টা চালু থাকলে দৈনিক ২ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু প্ল্যান্ট দুটি ১২ ঘণ্টা চালু থাকায় উৎপাদন হয় ১ কোটি ৪০ লাখ লিটার। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ৪৫টি গভীর নলকূপ থেকে প্রতিদিন সরবরাহ হচ্ছে আড়াই থেকে ৩ কোটি লিটার পানি। শুরুতে নলকূপগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ থাকলেও বর্তমানে যন্ত্রপাতি পুরানো হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমেছে। দিন দিন নাগরিক জীবনে পানির চাহিদা বাড়লেও সিসিকের সরবরাহ ক্ষমতা কমেই চলছে।
নগরীর পানির চাহিদা মেটাতে ২০১৬ সালে সিসিকের পক্ষ থেকে ‘চেঙের খাল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় সিসিক। ডিপিপি তৈরি করে ২০১৯ সালে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি যায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাইট ভিজিট করে প্রকল্পের পক্ষে মতামতও দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে সিলেটে ওয়াসা গঠন করায় আটকা পড়ে যায় প্রকল্পটি। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় প্রকল্পটি ওয়াসা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড গঠন হলেও সিলেটে এর কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে ওয়াসায় আটকা পড়ে থাকে পানি সরবরাহ প্রকল্পটি।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট শহরতলির বাদাঘাট এলাকার চেঙেরখাল নদী থেকে প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি নগরীতে সরবরাহ করা সম্ভব হতো। এতে পুরো নগরীর ৮০ ভাগ পানির চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু এখন ওয়াসা আর সিসিকের টানাপোড়নে ভেস্তে যেতে বসেছে প্রকল্পটি।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন তিনি। কিন্তু কমিটির বেশির ভাগ দায়িত্বশীল এখন সিলেটে নেই। তিনি বলেন, ওয়াসা গঠনের পর থেকে পানিসংকট নিরসনে কোনো প্রকল্পই সিসিক হাতে নিতে পারছে না। ফলে সংকট নিরসনও হচ্ছে না।