কমিউনিটির নিরাপত্তা দাবিতে নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সমাবেশ

নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের জনপদ নিরাপত্তাহীনতায় নিপতিত হয়েছে। একাকী পথ চলতে অনেকে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। এমনকি দোকানের ভেতরেও স্বস্তিতে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না মালিক-কর্মচারিরা। বিশেষ করে ওজোনপার্ক যেন দুবৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রায়দিনই এ এলাকায় প্রবাসীরা আক্রান্ত হচ্ছেন দিন-দুপুরে এবং রাতের আধারে।

সর্বশেষ গত ১২ মে সন্ধ্যায় ‘জারা লাইফস্টাইল’ নামক একটি মানি রেমিটেন্স ও পোশাক বিক্রির স্টোরে অস্ত্রের মুখে নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রি লুট করে নেয়ার ঘটনার ৬ দিন পরও দুর্বৃত্ত গ্রেফতার না হওয়ায় বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসীরা।

শুক্রবার (১৭ মে) ‘লিটল বাংলাদেশ ওয়ে’তে ওজোনপার্ক বাংলাদেশি বিজনেস এসোসিয়েশন’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ-সমাবেশে সর্বস্তরের প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এসময় সিটি প্রশাসনের সমালোচনায় অনেকে বক্তব্য প্রদান করেন।
বিজনেস এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি খায়রোল কবির খোকন ক্ষুব্ধচিত্তে বলেন, আমাদের ট্যাক্সে চলছে প্রশাসন। অথচ নিরাপত্তা প্রদানে চলছে সীমাহীন গড়িমসি। বার বার আবেদন জানিয়েও সাড়া মেলেনি পুলিশের টহল বৃদ্ধির।

ওজোনপার্ক কম্যুনিটির লিডার মিসবাহ আবদিন, আল আমান মসজিদের সভাপতি মোহাম্মদ কবির চৌধুরী, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিষ্ট আনোয়ার খান, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সেক্রেটারী ও কম্যুনিটি বোর্ড মেম্বার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, বোরহানউদ্দিন কপিল সমস্বরে অভিযোগ করে জানান, সন্ধ্যার পর অনেক রাস্তায় লাইট থাকে না। অন্ধকারে পথ চলার সময় অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। দিনের বেলায় পুলিশের টহল একেবারেই কম থাকায় নির্জন এলাকায় দুর্বৃত্তরা হামলে পড়ছে সহজ-সরল প্রবাসীদের ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় দিনই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।

বক্তারা অভিযোগ করেন, পুলিশের জরুরি সেবা সার্ভিস ৯১১-এ কল কলেও সাড়া পাওয়া যায় না অধিকাংশ সময়। অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয় যে-‘এটা আমাদের এলাকার মধ্যে নয়, তাই আবার ফোন করুন’। এ ধরনের অজুহাত দেখানো হচ্ছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। সিটি মেয়র অফিস, সিটি কাউন্সিল ও স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যানদের সাথে দেন-দরবার করেও সাড়া মেলেনি।

নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, শীঘ্রই ওজোনপার্ক এলাকায় একটি পুলিশ পোস্ট বসানো হবে। সেখানকার পুলিশ অফিসারেরা ঘনঘন টহল দিলেও নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় কেটে যাবে।

এ সমাবেশে এসেছিলেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩২ এর কাউন্সিলওম্যান জুয়ান এরিয়োলা। তিনি বক্তাগণের উদ্দেশ্যে জানান, আমারও এলাকা এটি। তাই আমি অন্যদের মত পাশ কাটাতে চাই না। লাইট পোস্ট যাতে আলোকিত থাকে, পুলিশের টহল যাতে বাড়ানো হয়-সে ব্যাপারে শীঘ্রই আমি সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করবো। এছাড়া একটি পুলিশ পোস্ট স্থাপনের জন্যেও কথা বলবো। এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষেল নিরাপত্তা বিধানে আমরা সংকল্পবদ্ধ। এ নিয়ে কালক্ষেপণের অবকাশ থাকতে পারে না। ওজোনপার্ক এলাকাটি ৩টি পুলিশ স্টেশনের সংযুক্তস্থল হওয়ায় একটি স্টেশনের পুলিশ আরেক স্টেশনের ওপর দায় চাপানোর যে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সেটি বন্ধ করতেও সহকর্মীগণের সাথে কথা বলবো।

এসময় সেখানে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও ছিলেন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল খান, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি বোরহান উদ্দীন কপিল, জারা লাইফ ষ্টাইলের মালিক রাজু আহমদ প্রমুখ।

এদিকে, এই বিক্ষোভ-সমাবেশের ঘন্টাখানেক পরই মাইল তিনেক দূর জ্যামাইকায় দুর্বৃত্তের হামলায় খোরশেদ আলম রিংকু নামে এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খোরশেদ রিংকু খন্ডকালীন কাজের পাশাপাশি ফটো সাংবাদিকতা করেন।

গত শুক্রবার বিকালে তিনি গাড়ি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে জ্যামাইকায় যান। সেখানে দুর্বৃত্তরা তার গাড়িটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বাধা দিলে দুর্বৃত্তরা চড়াও হয়ে তার মাথায় আঘাত করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গাড়ি উদ্ধার করে। কিন্তু এ ঘটনায়ও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি নিউইয়র্ক পুলিশ।

আরও উল্লেখ্য, জ্যামাইকায় গত ৫ এপ্রিল ভরদুপুরে জাকির হোসেন খসরু (৭৪) নামক এক প্রবাসীকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে কংক্রিটের রাস্তায় ফেলে দেয় এক দৃর্বৃত্ত। তার মাথ ফেটে যায় এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালে ভর্তি করলেও খসরুর জ্ঞান ফিরেনি এবং ১০ এপ্রিল হাসপাতালেই তিনি মারা যান। জাকির হোসেন খসরুর মৃত্যুর ঘটনায় গত ১২ মে হিলসাইড এভিনিউ সংলগ্ন স্থানে প্রবাসীরা তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেই দুর্বৃত্তকেও নিউইয়র্ক পুলিশ এখন পর্যন্ত গ্রেফতারে সক্ষম হয়নি। এমন অবস্থায় গোটা কম্যুনিটি এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে নিপতিত হয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights