কালীগঞ্জে মামলাবাজ কলেজ অধ্যক্ষের গ্রেফতারের দাবীতে ছাত্রদের সড়ক অবরোধ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
একাধিক দূর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বহিস্কৃত কালীগঞ্জ সরকারী এম ইউ কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানকে স্থায়ী বহিস্কার ও গ্রেফতারের দাবীতে সড়ক
অবরোধ করেছে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। রোববার বেলা ১১ টার দিকে কলেজ গেট সন্মুখে ঢাকা – খুলনা মহাসড়কে কাঠের গুড়ি ফেলে প্রায় ঘন্টাব্যাপী অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচী করে তারা। এ সময় সড়কের দু’পাশে শত শত যাত্রীবাহী বাস ট্রাক আটকে দূভোর্গে পড়েন জনগন। অবরোধে অংশ নেওয়া কলেজের কয়েকশত
ছাত্রছাত্রী সড়কে বসে ব্যানার, প্লে-কাড প্রদর্শন ও মুহুমুহু স্লোগান দিয়ে
মিথ্যা মামলাকারী অধ্যক্ষ ও স্বাক্ষীদের শাস্তির দাবী জানান। পরে পুলিশ প্রশাসন এসে
ছাত্রছাত্রীদের দাবীর প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। শেষে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন দাবী সম্বলিত একটি স্বারকলিপি ঝিনাইদহ
জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদান করেন।
মানববন্ধন ও অবরোধে অংশ নেওয়া অত্র কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র শেখ হাসিবুল ইসলাম জানান, কলেজের ১ম ও ২য় বর্ষের প্রায় ৫ শতাধিক
ছাত্রছাত্রী তাদের কেন্দ্র ফিস বাবদ কলেজের ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা দিয়েছিল।
গত ১৫/০২/২৩ তারিখে কলেজের সভাপতি কালীগঞ্জ ইউএনও এবং জৌষ্ট শিক্ষক
স্বাক্ষরিত ব্যাংক চেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার ২১ টাকা ওত্তোলন করেন। ওই টাকা কেন্দ্র
ফিস জমা বাবদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সোনালী ফিস ব্যাংক একাউন্টে জমা
দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন ওই সাময়িক বহিস্কৃত অধ্যক্ষ কতর্ৃক ইউএনও ও
শিক্ষকসহ ৭ জনের নামে একটি হয়রানীমুলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ভ্থক্তভোগি
ছাত্রছাত্রীরা আরো জানান, ওই কেন্দ্র ফিসের টাকা তুলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে
জমা না দিলে তাদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যেত। অনুরুপভাবে কলেজের
অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র ফিরোজ ইসলাম জানায়, বর্তমানে অত্র কলেজের ৩য় ও ৪র্থ
বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা তাদের কেন্দ্র ফিসের টাকা ব্যাংকে জমা দিচ্ছেন। সপ্তাহ খানেক
পরই ওই টাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র ফিস বাবদ জমা দিতে হবে। এ সময়ও
যদি ওই মামলাবাজ অধ্যক্ষ বিরোধ সৃষ্টি করে তাহলে ছাত্রদের ভবিতষৎ নষ্টের উপক্রম হতে
পারে। তাই তারা অভিযুক্ত ওই অধ্যক্ষকে স্থায়ী বহিস্কারের দাবী জানান। ছাত্রদেও
আয়োজনে ওই মানববন্ধনে কলেজের অনেক শিক্ষকগনও অংশ নেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই জানান, ওই অধ্যক্ষ মাহবুবুর
রহমানের নিয়োগ বৈধ ভাবে হয়নি। তার অভিজ্ঞতার সনদ ও আবেদনপত্রে বেশ ত্রুটি
আছে। এছাড়াও তিনি যোগদানের পর থেকেই একাধিক দুর্নিতীতে জড়িয়ে
পড়েন। তার বিরুদ্ধে কলেজের অর্থ আত্নসাৎ সহ নানাবিধ ১৫ টি অনিয়ম ধরাপড়াতে কলেজ কতর্ৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। এ সংক্রান্ত মামলাটি
দির্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতে ঝুলছে।
অবরোধ কর্মসূচি শেষে ছাত্রছাত্রীরা তাদের দাবী সম্বলিত একটি স্বারকলিপি
জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদান করেছেন। তাদের দাবী আগামী ৭ দিনের মধ্যে না
মানলে সাধারন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অনিদিষ্ট কালের জন্য ক্লাস বর্জন ও মহাসড়ক
অবরোধের আল্টিমেটাম দেয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সরকারী মাহাতাব উদ্দিন কলেজের সাময়িক বহিস্কৃত অধ্যক্ষ
মাহবুবুর রহমান জানান, আমার স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন
করাতে আমি মামলার আশ্রয় নিয়েছি। এ পর্ষন্ত আমার স্বাক্ষর ছাড়া যারা কলেজের
অর্থ উত্তোলন করেছে তারা সকলকেই মামলার আওতায় আসবে। আর মামলা সত্য না
মিথ্যা, সেটি আদালতই বুঝবে। এখন মামলা নিয়ে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যে
আন্দোলন করছে তাতে আমার কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, কলেজের
ছাত্রছাত্রীরা ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে তার দপ্তরে এসেছিল।
বিষয়টি তদন্তের পরই দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights