কী কারণে আনার হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার মোটিভ এখনো অজানা। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ কিংবা ভারতীয় পুলিশ কেউই জানতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তবে নিহত এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের দাবি, তার বাবার হত্যার পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত থাকতে পারে। অন্যদিকে, ভিসা না পাওয়ায় গতকাল ভারতে যেতে পারেননি ডরিন। ভারতে যাওয়ার পরই তার ডিএনএ নমুনা নিবেন বিশেষজ্ঞরা। সঞ্জীভা গারডেনস-এর সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা মাংস, চুল এবং হাড়ের ডিএনএ এর সঙ্গে মিললেই নিশ্চিত হবে তা এমপি আনারের লাশের অংশ কি না। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে অর্থাৎ হত্যার মোটিভ কী? এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ কিংবা ভারতীয় পুলিশ কেউই জানতে পারেনি। ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, এই হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারী এবং পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন এখন দেশের বাইরে রয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তাই হত্যার কারণ এখনো কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। তাকে গ্রেফতার করলেই কেবল এই হত্যার মোটিভ জানা যাবে। গতকাল ডিএমপি সদর দফতরে ‘ডাটাবেজ অ্যান্ড এনালাইসিস অব রোড ক্র্যাশ (ডিএআরসি)’ সফটওয়্যার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। হত্যাকান্ডের মূল অভিযুক্ত শাহিনকে ফেরাতে কূটনৈতিকভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় এই নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের প্রচেষ্টা করা দরকার সেটির সর্বোত্তম চেষ্টা করা হবে। যেহেতু তিনি আমাদের সংসদ সদস্য ছিলেন সুতরাং বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

ভারতের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তিকে কাজে লাগানো হবে কি না, জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, আপনারা জানেন, এই ঘটনাটি বাংলাদেশের আইনে বিচার হতে পারে এবং ভারতে যেহেতু ঘটনা ঘটেছে সেখানেও বিচার হতে পারে। সুতরাং এটি আমাদের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত এমপি কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন, স্ত্রী শেফালী বেগম ও পিএস আবদুর রউফ কেউই ভারতীয় ভিসা পাননি। এমপি আনার ভারতে ১৩ মে রাতে নিখোঁজ হওয়ার পর ঢাকাতে গিয়ে তারা ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। এমপি কন্যা ডরিন বলেন, আমার বাবা হত্যার পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত থাকতে পারে। আমাদের সন্দেহ ভোটের আগে বাবাকে কয়েকবার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু হত্যা করতে পারেনি। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে ধরতে না পারলে সন্দেহ সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তাদের ওপরেও কেউ থাকতে পারে। তবে যারা ধরা পড়েছে তারা হত্যার জন্য ৫ কোটি টাকায় কন্ট্রাক্ট করেছিল। তারা তিনবার চেষ্টা করে শেষবার সফল হয়েছে। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এসব কথা বলেন ডরিন।
তিনি বলেন, বাবা হত্যার সঠিক বিচার চাই। আসামি যারা রয়েছে, তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় এনে বিচার করা হোক। আমার বাবা জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন বলেই প্রধানমন্ত্রী তাকে বারবার মনোনয়ন দিয়েছেন। বাবার হত্যার বিচারের বিষয়টি অন্যদিকে ধাবিত করার জন্য প্রতিপক্ষরা উঠে পড়ে লেগেছে।

তিনি আরও বলেন, ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের দলা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু খন্ডাংশ বাবার কি না তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। এ জন্য ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে কলকাতা যেতে হতে পারে। যদি কলকাতা পুলিশ আমাকে ডাকে তাহলে ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে সেখানে যাব।

ঝিনাইদহে আলোচনায় এমপির ঘনিষ্ঠ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কয়েকজন : গত কয়েক দিন ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনায় এমপি আনারের ঘনিষ্ঠ ও রাজনৈতিক কয়েকজন প্রতিপক্ষের নাম আসছে। আক্তারুজ্জামান শাহিন তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক পার্টনার। আনারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার পিছনে অনেকগুলো বিষয় উঠে আসছে। তার মধ্যে অন্যতম এমপি আনারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে শাহিন গত কয়েক বছরে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এমনকি সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি আনারের সঙ্গে যাদের বিরোধিতা ছিল তাদেরও কাছে টেনেছেন শাহিন। গত বছর দেড়েক ধরে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা। তার মাধ্যমে নিজের ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়ে জেলার গুরুত্বপূর্ণ দফতরের কাজ হাতিয়ে নিত শাহিন।

হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন : এমপি আনার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে কালীগঞ্জ বারোবাজার, কাষ্টভাঙ্গা ও রাখালগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গতকাল বিকালে বারোবাজার বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রাশেদ শমশের, জাহাঙ্গীর হোসেন ঠান্ডু, শিবলী নোমানীসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানরা।

আজ ফিরছে পুলিশের প্রতিনিধি দল : এমপি আনারের নিখোঁজ রহস্য উন্মোচনের জন্য ভারতে যাওয়া তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল আজকে দেশে ফিরছে। গত রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ওয়ারী) উপকমিশনার আবদুল আহাদ। গত ২৬ মে রবিবার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল ভারতের কলকাতায় যায়। টিমের আরেক সদস্য হলেন ডিবি ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান রিপন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights