কুককে পেছনে ফেলে টেস্টে ইংল্যান্ডের ‘রাজা’

অনলাইন ডেস্ক

আমির জামালের ফুল লেংথ বলে নিখুঁত এক অন ড্রাইভ। বল পৌঁছে গেল সীমানায়। জো রুট পা রাখলেন চূড়ায়। ক্যারিয়ারে এমন অন ড্রাইভ অসংখ্য খেলেছেন রুট। তবে এই বাউন্ডারি আর দশটি শটের মতো নয়। ইংল্যান্ডের ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে এটি। এই শটেই যে নতুন উচ্চতায় পা রাখলেন রুট!

ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান এখন রুট। পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্টের তৃতীয় দিন লাঞ্চের একটু আগ তিনি পেছনে ফেললেন অ্যালেস্টার কুককে। গ্যালারিতে থাকা ইংলিশ সমর্থকেরা দাঁড়িয়ে তালি দিয়ে অভিবাদন জানালেন রুটকে। ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অবশ্য খুব উচ্ছ্বাস দেখালেন না। ড্রেসিং রুমের দিকে আলতো করে হাত নাড়ানো আর একটু ব্যাট উঁচিয়েই সীমাবদ্ধ ছিল উদযাপন। তার মনোযোগ ইনিংস আরও বড় করায়।

কুকের চেয়ে ৭০ রান পেছনে থেকে এই টেস্ট শুরু করেছিলেন রুট। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেললেন মূলতানের ২২ গজে। ২৯১ ইনিংস খেলে ১২ হাজার ৪৭২ রান নিয়ে এতদিন শীর্ষে ছিলেন ২০১৮ সালে অবসরে যাওয়া কুক। তাকে ছাড়িয়ে যেতে রুটের লাগল ২৬৮ ইনিংস। রেকর্ডটি নিজের করে নেওয়ার সময় ১৪৭ টেস্টে রুটের ব্যাটিং গড় ৫০.৯১। কুক ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ১৬১ টেস্টে ৪৫.৩৫ গড় নিয়ে।কুকের ৩৩ সেঞ্চুরি ছাপিয়ে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান আগেই হয়ে গেছেন রুট। এই ইনিংসে আরও একবার তিন অঙ্ক ছুঁয়ে তার সেঞ্চুরি সংখ্যা এখন ৩৫।
ইংল্যান্ডের হয়ে ৯ হাজার রান বা ২৪টি সেঞ্চুরি নেই আর কারও। ৮ হাজার ৯০০ রান নিয়ে তিনে আছেন গ্রাহাম গুচ, ৮ হাজার ৪৬৩ রান নিয়ে চারে অ্যালেক স্টুয়ার্ট এবং পাঁচে থাকা ডেভিড গাওয়ারের রান ৮ হাজার ২৩১। এছাড়া ৮ হাজার রান করেছেন কেভিন পিটারসেন ও জেফ বয়কট। সেঞ্চুরিতে রুট ও কুকের পরে আছেন কেভিন পিটারসেন (২৩)।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই ইংলিশ ক্রিকেটে সাড়া জাগিয়ে ভবিষ্যতের গ্রেট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন রুট। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে টেস্ট ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু হয় ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে। শুরুতে যে সম্ভাবনার ছাপ রেখেছিলেন, সময়ের সঙ্গে তা পায় পূর্ণতা।

একটা সময় অবশ্য তাকে নিয়ে কিছুটা হতাশাও ছড়িয়ে পড়েছিল ইংলিশ ক্রিকেটে। বারবার ফিফটিতে আটকা পড়ছিলেন, ইনিংস সেভাবে বড় করতে পারছিলেন না। সমসাময়িক অন্য তিন গ্রেট স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন ও ভিরাট কোহলির তুলনায় সেঞ্চুরির হারে তিনি পিছিয়ে ছিলেন। তবে গত কয়েক বছরে রানের জোয়ারে সব আক্ষেপ ভাসিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেঞ্চুরি সংখ্যায় পেছনে ফেলেছেন ওই তিনজনকেই।

৯৭ টেস্ট শেষে তার সেঞ্চুরি ছিল ১৭টি। পরের ৪৮ টেস্টেই সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনি ১৭টি! সেই রান প্রবাহ ধরেই এখন তিনি পৌঁছে গেলেন নতুন তীরে।
তার যা বয়স ও ফর্ম, তাতে এই স্রোত বইতে থাকবে বলেই ধারণা করা যায় সহজে। ইংল্যান্ডের চূড়ায় ওঠা তার অনুমিতই ছিল। তাকে নিয়ে গত কিছুদিন ধরে বরং আলোচনা, শচীন টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলে তিনি টেস্ট ইতিহাসের সবার ওপরে উঠতে পারবেন কি না।

এখন রুটের ওপরে আছেন আর কেবল চারজন। ১৩ হাজার ২৮৮ রান রাহুল দ্রাবিড়ের, ১৩ হাজার ২৮৯ রান জ্যাক ক্যালিসের, ১৩ হাজার ৩৭৮ রিকি পন্টিংয়ের। সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে টেন্ডুলকারের রান ১৫ হাজার ৯২১। ইংল্যান্ড যে পরিমাণে টেস্ট ম্যাচ খেলে, তাতে টেন্ডুলকারের ২০০ টেস্ট খেলার রেকর্ড বা তার রানকে পেছনে ফেলা রুটের জন্য অসম্ভব নয় মোটেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights