ক্যাম্পাস সংস্কারের ৪১ প্রস্তাবনা নিয়ে জাবি শিবিরের সংবাদ সম্মেলন

জাবি প্রতিনিধি

কয়েকদিন আগেই আত্মপ্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের শীর্ষ তিন নেতা। এবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন তারা। এ সময় ক্যাম্পাস সংস্কারে ৪১ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তারা।

রবিবার বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) কনফারেন্স কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

এ সময় ক্যাম্পাস সংস্কারের লক্ষ্যে ৪১ দফা প্রস্তাবনা ঘোষণা করেন জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি ও সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান মুহিব। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকি।
শাখা ছাত্রশিবিরের নেতারা বলেন, আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত হাজির করেছে, যা নিপীড়িত জনতার একক কণ্ঠস্বরকে প্রাধান্য দিয়ে দীর্ঘদিনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বাংলাদেশকে একটি নতুন দিগন্তে পুনর্গঠিত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রের কার্যকরী সব খাত ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তাকে সুস্পষ্ট করেছে। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে জরুরি সংস্কারের তাগিদ অত্যন্ত তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।

তারা বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলদাস ও পরাধীন মানসিকতাসম্পন্ন চিন্তাহীন প্রজন্ম তৈরির কারখানার আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোনো রকম পরিকল্পনা ছাড়াই উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কৌশলে লুটপাট চালিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসকে করা হয়েছে কংক্রিটের নগর। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী আদলে চলতে চলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদার গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা ভয়াবহভাবে ব্যাহত হয়েছে।

ক্যাম্পাসে নতুনভাবে আশার দিক উন্মোচন হবে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের পরবর্তী নতুন সময়ে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এই ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে নতুনভাবে পুনর্গঠিত হয়ে অবারিত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অ্যাকাডেমিক কাঠামো ও সামগ্রিক পরিচালনা ব্যবস্থায় সংস্কার আনা অত্যন্ত জরুরি এবং এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আজ এমন একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি, যা অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষ, সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং শিক্ষার্থী কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সংকটগুলোকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের মাধ্যমেই জাবি বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি রোল মডেল হতে পারে। যেখানে শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক এবং ব্যক্তিগতভাবে বিকশিত হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ ও পর্যাপ্ত সুযোগ পাবে।

জাবি ছাত্রশিবিরের উত্থাপিত ৪১ দফার মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানে আহত বিপ্লবীদের স্বাস্থ্য সেবা ও পুনর্বাসন, জুলাই-আগস্টের ঘটনার বিচার, ১৬ জুলাইকে জাবিতে সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা, জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি সংরক্ষণ, জাকসু নির্বাচন, মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গঠন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠন, অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, অযাচিত ফি কমানো ও বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা অন্যতম।

এর আগে, গত ২৯ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে জাবিতে এক বিবৃতির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights