চট্টগ্রাম ঈদ বাজার: পোশাকের বাড়তি দাম নেয়ার অভিযোগ

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। ঈদ বাজারে এখন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তবে পোশাকের দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের শেষ নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চ মূল্যের ঢেউ ঈদ বাজারেও পড়েছে। প্রতিটি পোশাকে মাত্রাতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। বাড়তি দামের কারণে নিম্ন মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিক্রির পরিমাণ কম হওয়ায় পুঁজি তুলে আনতে চ্যালেঞ্জে পড়বেন তারা।

চট্টগ্রামের বৃহত্তম বিপণী কেন্দ্রগুলো হলো টেরিবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, জহুর হকার মার্কেট, নিউমার্কেট, দুই নং গেট, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, ইপিজেড। এসব বিপণী কেন্দ্রে একসাথেই জামা-জুতো-জুয়েলারির অনেকগুলো দোকান, শোরুম রয়েছে। এর বাইরে সানমার ওশান সিটি, আখতারুজ্জামান, আমিন সেন্টার, ইউনেস্কো, ফিনলে, শপিং সেন্টারসহ বেশকিছু বড় আকার শপিং মল আছে।

চট্টগ্রামের প্রতিটি বিপণী কেন্দ্র এবং শপিং মলে এখন ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়। কেউ নিজের জন্য, পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের জামাটি কিনতে ঘুরছেন দোকানে দোকানে। তবে বেশিরভাগ ক্রেতার অভিযোগ একটাই। সেটা হচ্ছে গত বছরের তুলনায় এবার জামা কাপড় কিনতে অস্বাভাবিক বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার পণ্য ও মার্কেটভেদে ৫০-৬০ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।
২ নং গেট শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করতে আসা ওমর খৈয়াম ও সুমনা আফরোজ দম্পতি বলেন, ‘বাড়তি দামের কারণে সবচেয়ে বেকায়দায় নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যাদের বেতন ১০-৩০ হাজার টাকার মধ্যে তারা ঈদ উপলক্ষ্যে বেতন বোনাস পাওয়ার পরও আয় ব্যয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারছেন না। যাদের পরিবারে দুই, তিনজনের বেশি সদস্য রয়েছে তারা আরো বেশি সংকট মোকাবেলা করছেন। মধ্যবিত্তদের বেশিভাগ অংশও প্রায় একই ধরণের সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি গার্মেন্ট কারখানার স্টোরে কর্মরত আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বেতন ও বোনাস মিলিয়ে তিনি ২৭ হাজার টাকার মতো পেয়েছেন। স্ত্রী ছাড়াও দুই সন্তান আছে। এদের জন্য কেনাকাটা করার পাশাপাশি মা’র জন্য শাড়ি কিনবেন। আবার ঈদের দিনের জন্য সেমাই, চিনি, দুধসহ নিত্যপণ্য কিনবেন। আবার ঈদে গ্রামের বাড়ি আসা যাওয়ার গাড়ি ভাড়া, বাসা ভাড়া, ঈদ পরবর্তী খরচও আছে। এই টাকার মধ্যে সবকিছু ম্যানেজ করা ভীষণ কঠিন।’

তবে উচ্চ বিত্তের ঈদ কেনাকাটায় বাড়তি দামের কোনো প্রভাব নেই বলে মনে করেন শিক্ষক মনসুর নবী। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের মিমি সুপার মার্কেটসহ উচ্চবিত্তের লোকজনের পছন্দের শোরুমগুলোতে কেনাকাটা থেমে নেই। বাড়তি দাম হলেও তাদের অবৈধ আয়ের সুযোগ আছে। অঢেল টাকা আছে। বাড়তি দাম তাদের জন্য কোনো ইস্যু নয়।’

গত কয়েকদিন চট্টগ্রামের একাধিক বিপণী কেন্দ্র ও শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের আমদানি করা পোশাকও শোভা পাচ্ছে। বিশেষ করে থ্রিপিসসহ তরুণী ও নারীদের পোশাকে প্রতিবেশী দেশগুলোর আধিপত্য বেশি। তবে কারো কারো পছন্দের তালিকায় দেশীয় সুতির জামাও আছে। তরুণদের পাঞ্জাবীর বাজারে অবশ্য দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য বেশি।

ক্রেতারা বলছেন, তিন হাজার টাকার নিচে কোনো ভালো মানের পাঞ্জাবী বাজারে নেই। কম দামে কিনতে গেলে মান ভালো হবে না। আর জিন্স প্যান্টসহ ছেলেদের জামা-জুতোর দামও গত বছরের তুলনায় অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে। নারীদের থ্রিপিসের বাড়তি দাম নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তবে দেশীয় শাড়িসহ কিছু পণ্যের দাম সহনশীল। আর শিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রে একই ধরণের জামা এক এক মার্কেটে এক এক দামে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে একাধিক বিক্রেতা বাড়তি দামের বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, আমদানি করা সুতাসহ পোশাক তৈরির অন্যান্য কাঁচামালের দাম বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে। একারণে পোশাক তৈরি কিংবা পাইকারিতে বাড়তি খরচ পড়ছে। তবে ক্রেতারা যতোটা দাম বাড়ার অভিযোগ করছেন ততটা বাড়েনি। বিক্রির পরিমাণ কম হওয়ায় অনেকে পুঁজিও তুলে আনতে পারেন কিনা সন্দেহ আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights