চিরাচরিত রূপে নেই ডেঙ্গু

ডা. মো. শরীফ উদ্দিন
এ বছর ডেঙ্গু তার চিরাচরিত রূপ পরিবর্তন করেছে। সাধারণত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রমণের হার সর্বাপেক্ষা বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু এ বছর প্রাক বর্ষা মৌসুম থেকেই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে রোগীর সংখ্যা, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে রোগীর আসন সংখ্যার বিপরীতে কয়েক গুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। এবারের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই শুরুতেই জটিলতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে যেটা খুবই উদ্বেগজনক। ডেঙ্গুজ্বর হলে শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। মুখে কোনো স্বাদ থাকে না। এমনকি পানি পান করতেও ইচ্ছা করে না। ফলে রোগী খুব সহজে পানিশূন্য হয়ে যায়। পানিশূন্যতা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ডেঙ্গু মূলত তিনভাবে প্রকাশিত হতে পারে, সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর, রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বর এবং এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম (বিরল কিন্তু ভয়াবহ রূপ যেখানে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি)। পানিশূন্যতা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গুজ্বরের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। কারণ, এখানে দুই উপায়ে একজন রোগী পানিশূন্য হতে পারে- ১। প্রচণ্ড অরুচি ও দুর্বলতার কারণে তরল খেতে না পারা। ২। প্লাজমা লিকেইজ অর্থাৎ, ডেঙ্গুর ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত সাইটোকাইনের প্রভাবে রক্তনালির মধ্যে ফুটো তৈরি হওয়ায় রক্তের তরল অংশ রক্তনালি থেকে বের হয়ে রক্তকে ঘন করে। এ ছাড়া পানিশূন্যতার জন্য অনেক সময় রোগী হাইপোভলেমিক শকে চলে যায়, যাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে। এতে হার্ট দুর্বল হয়ে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন লিভার, কিডনি অকেজো হয়।

ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ : জ্বর, মাথাব্যথা, মাংস পেশিতে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে লাল লাল দানা, বমি ভাব/বমি হওয়া, পাতলা পায়খানা, খাবারে অরুচি, প্রচণ্ড ক্লান্তি বা অবসাদ ভাব।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য করণীয় : প্রচুর পরিমাণে মুখে ওরস্যালাইন ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে (অন্তত ৩ লিটার দৈনিক)। জ্বর/ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়ানো। রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখা। রোগীকে দিনের বেলায় মশারির ভিতর রাখা। বাড়ির আশপাশের মশার উৎপত্তিস্থল অবশ্যই ধ্বংস করা। এ ছাড়া নিম্নলিখিত বিপদচিহ্ন দেখামাত্র অনতিবিলম্বে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো।

ডেঙ্গু রোগীর বিপদচিহ্নসমূহ : পেটে তীব্র ব্যথা হওয়া। খুব বেশি বমি হওয়া বা বমি না থামা। মুখে একেবারেই খেতে না পারা। তন্দ্রাভাব বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়া। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া। বুক ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হওয়া। শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া (মহিলাদের মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত যাওয়া)। আলকাতরার মতো নরম কালো পাতলা পায়খানা হওয়া। ৪-৬ ঘণ্টার বেশি সময় প্রসাব না হওয়া।

ঝুঁকিতে যারা : দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে এবং অনিয়ন্ত্রিত, যেমন : ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা, নবজাতক ও শিশুরা, গর্ভবতী, যারা পূর্বে অন্য সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, বয়স্ক রোগীরা।

লেখক: সিনিয়র রেসিডেন্ট, মেডিসিন বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights