জনবল ঘাটতিতে বিঘ্ন সেবা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতালে শয্যা আছে ১১০টি। অথচ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকে মাত্র ৮ থেকে ১০ জন। চিকিৎসকের পদ আছে ২০টি অথচ বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র চারজন। সমৃদ্ধ অপারেশন থিয়েটার (ওটি) আছে, কিন্তু জনবল-যন্ত্রপাতির অভাবে হয় না অপারেশন; সব সময় থাকে তালাবদ্ধ। এ অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রাংশ। হাসপাতালটিতে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তা এখন অচল। সেই সঙ্গে আছে পানির সংকট। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রেলওয়ে হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত ভবন, অবকাঠামো ও কিছু চিকিৎসা উপকরণ থাকলেও জনবল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। বড় রোগের চিকিৎসা তো বটেই, সব ধরনের চিকিৎসার জন্য রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেতে হয় বাইরের হাসপাতালে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় বাইরের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে তাদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তরের পাশে ব্রিটিশ আমলে হাসপাতালটি নির্মিত হয়। ১১০ শয্যার এ হাসপাতালে ৪টি সাধারণ কেবিন, দুটি ভিআইপি কেবিন ও একটি অপারেশন থিয়েটার আছে। চিকিৎসকের ২০টি পদ থাকলেও আছেন মাত্র চারজন। বর্তমানে কর্মরত আছেন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা, বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা, বহির্বিভাগের সহকারী সার্জন ও ডেন্টাল সার্জন। এনেসথেসিওলিস্ট, গাইনি ও জরুরি বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের চিকিৎসকের পদগুলো শূন্য। হাসপাতালে ছয়জন সিনিয়র নার্স থাকার কথা থাকলেও আছে আটজন জুনিয়র নার্স। উল্লেখ্য, হাসপাতালটিতে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, ১৬ ধরনের রক্তের পরীক্ষা ও প্রায় ৩০ প্রকারের ওষুধ দেওয়া হয়।

সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তা লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, এ হাসপাতালে আশির দশকে রোগীর ব্যাপক ভিড় ছিল। রেলে কর্মরতরা এখান থেকেই চিকিৎসা নিত। কিন্তু পর্যায়ক্রমে চিকিৎসক বদলি ও অবসরে যাওয়ার পর সংকট তৈরি হয়। বর্তমানে এখানে সব আছে, নেই কেবল চিকিৎসক। ভবনটি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। আমি মনে করি, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিলে এটি চিকিৎসাসেবায় আগের চিত্রে ফিরে আসবে।

এদিকে সেবা ব্যাহত হওয়া প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আবদুল আহাদ বলেন, হাসপাতালে ভবন আছে, অপারেশন থিয়েটার আছে, ওষুধ আছে, রোগ নির্ণয়ের ভালো ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু নেই কেবল জনবল। প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণেই রোগীদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ওটি স্রেফ পড়ে আছে। তাছাড়া একজন চিকিৎসক ছুটিতে গেলেই আমাকে প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে সঙ্গে রোগীও দেখতে হয়। এসব বিষয় নিয়ে আমরা অনেকবার লিখেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, ‘বিষয়টা আমাদেরও ভাবায়। তবে এ হাসপাতাল নিয়ে আমরা একটা নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে একটা প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে হাসপাতালটি নিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights