জাপানে জীবনযাত্রার মানের অবনতি

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বজুড়েই চলছে মূল্যস্ফীতি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন ধনী রাষ্ট্রেও এর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন প্রায় সবদেশের শ্রমিক শ্রেণির মানুষ।

পূর্ব এশিয়ার ধনী রাষ্ট্র জাপানেও এর প্রভাব পড়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির জনজীবনে চলমান অস্থিরতা কমাতে মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তা সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান মূল্য পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যথেষ্ট মজুরি পাচ্ছেন না জাপানের সাধারণ শ্রমিকরা। চলমান পরিস্থিতি ব্যাংক অব জাপানের (বিওজে) নতুন গভর্নর কাজুও উয়েদার মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে উঠেছে। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে তিনি গভর্নরের দায়িত্ব নিয়েছেন।

সরকারি তথ্যানুসারে, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করলে জাপানের মজুরি ফেব্রুয়ারিতে বছরওয়ারি ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আহ্বান সত্ত্বেও টানা প্রায় ১১ মাস ধরে মজুরি হ্রাসের প্রবণতা অব্যাহত ছিল।
এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সমস্যাটি সম্ভবত বিওজের নতুন গভর্নর কাজুও উয়েদার চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। চলমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে উয়েদার পূর্বসূরি হারুহিকো কুরোদা তার অতি-শিথিল আর্থিক নীতির জন্য গর্ভনরের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার চাপে ছিলেন।

এদিকে ফেব্রুয়ারিতে জাপানের মূল্যস্ফীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছে ৩ দশমিক ১ শতাংশে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, পরিস্থিতি সামলাতে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ বরাদ্দ করা উচিত।

তবে সমস্যাটি হচ্ছে, শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদার পরিবর্তে ভোক্তাব্যয়কে প্রভাবিত করছে ক্রমবর্ধমানভাবে আমদানি খরচের বিষয়টি। এ অবস্থায় গভর্নরের জন্য সুদের হার বাড়ানোটা কঠিন হবে, বিশেষ করে এমন একটা সময় যখন জীবনযাত্রার মানও বাড়ছে না।

কয়েক দশকের স্থবিরতার পর জাপানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে নতুন আর্থিক নীতি নিয়ে আসেন উয়েদার পূর্বসূরি হারুহিকো কুরোদা। তার স্বাক্ষরিত অতি-শিথিল মুদ্রানীতি ইয়েনকে দুর্বল করে রফতানি বাড়াতে সফল হলেও বাজার পরিস্থিতিকে অস্থির করার জন্য সমালোচিত হয়।

এদিকে ইয়োদা যদি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের আগে আর্থিক নীতিকে কঠোর করেন, তাহলে চাহিদার লাগাম টেনে তা বরং অর্থনীতির ক্ষতি করবে। এ কারণেই অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সুদের হার বৃদ্ধির আগে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মজুরি পরিস্থিতিকে শক্তিশালী করতে হবে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশ কিছুদিন ধরেই মজুরি বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি কিছুদিন আগে জাপানের বার্ষিক শ্রম আলোচনায় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়।

গত মার্চে জাপানের শীর্ষ কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকরা নতুন অর্থবছরে কর্মীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বার্ষিক মজুরি আলোচনার পর কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ মজুরি বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত মাসে দেশটির বৃহত্তম শ্রম গোষ্ঠী রেঙ্গোর পক্ষ থেকে বলা হয়, ৮০০টিরও বেশি ইউনিয়ন ও তাদের নিয়োগকর্তারা গড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছেন, যা ২০১৩ সালের পর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। আশা করা হচ্ছে, নতুন বেতন ও ভাতা দেওয়ার কার্যক্রম দেশটিতে চলতি মাস থেকেই কার্যকর হবে।

অর্থনীতিবিদরা অবশ্য বলছেন, উদ্যোগটি জাপানের চলমান অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights