জিম্মি দশা থেকে মুক্তির মহড়া বসুন্ধরা সিটিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ঢাকার পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স অন্যান্য দিনের মতো গতকালও ছিল লোকে লোকারণ্য। এর মধ্যেই দুপুর ১টা নাগাদ বদলে যায় চিত্র। বেইসমেন্ট-১-এর ডে কেয়ার সেন্টারে ঢুকে পড়ে অস্ত্রধারী দুই সন্ত্রাসী। শিশুদের এবং তাদের পরিবারের কয়েকজনকে জিম্মি করে ফেলে সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে ছুটে আসে বসুন্ধরা সিটির নিজস্ব সিকিউরিটি ইউনিট। তারা গিয়ে বাইরে থাকা দুই সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করে। আর ভেতরে পাঠানো হয় বসুন্ধরা গ্রুপের ডগ স্কোয়াডের দুটি কুকুর। এরপর অস্ত্রধারী দুই সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করে।

ওপরের বর্ণনাটি মহড়ার দৃশ্য। বসুন্ধরা সিটিতে যদি কখনো কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে সেটি কিভাবে মোকাবেলা করবে তারই মহড়া ছিল এটি। মহড়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের (বিসিডিএল) মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মেজর মো. রবিউল ইসলাম (অব.) এবং বিসিডিএলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) ক্যাপ্টেন ফাহিম আহমেদ খান (অব.)।

মহড়ায় দেখানো হয়, বেজমেন্ট-২-এ থাকা ডে কেয়ার সেন্টারে ৭-৮ জন শিশু ও দুই তিন জন মা রয়েছেন। দুপুর ১টার দিকে লোক সমাগমের মাঝখানে প্রথমে সন্ত্রাসীদের দুজন ডে কেয়ারটি রেকি করেন। এর পর অস্ত্রধারী দুই সন্ত্রাসী পিস্তল উচিয়ে ঢুকতে যায় ডে কেয়ার সেন্টারের ভেতরে। ওই সময় একজন পুরুষ ও একজন নারী গার্ড তাদের রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে পুরুষ গার্ড নিহত ও মহিলা গার্ড গুলিবিদ্ধ হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন। এই সুযোগে দুই সন্ত্রাসী ঢুকে পড়ে ডে কেয়ার সেন্টারের ভেতরে। তাদের জিম্মি করার পর শিশুরা ও তাদের মায়েরা বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। ঠিক ওই সময় বসুন্ধরা সিটির নিরাপত্তা কর্মীরা বিষয়টি জানতে পেরে তারাও অস্ত্র নিয়ে জিম্মিকারীদের ধরে ফেলার চেষ্টা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা বেজমেন্ট-১ ও বেজমেন্ট-২-এ বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। বোমা বিস্ফোরণের শব্দ ছড়িয়ে যায় বসুন্ধরা সিটির বাইরেও। বসুন্ধরা সিটির নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে বেজমেন্ট-১-এর দুই সন্ত্রাসী ও বেজমেন্ট-২-এ দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়। আহত হয় অনেকে। অন্য দুই সন্ত্রাসী তখনো শিশুদের জিম্মি করে রাখে। এ সময় বসুন্ধরার নিরাপত্তা কর্মীরা হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা করতে থাকেন ‘আপনাদের দুজন হতাহত। সারেন্ডার করেন। আপনাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’ সারেন্ডার করার ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও জিম্মি করে রাখা দুই সন্ত্রাসী সারেন্ডার করেনি। এ সময় বসুন্ধরার ডগ স্কোয়াডের দুই কুকুর পাঠানো হয় ডে কেয়ার সেন্টারের ভেতরে। কুকুর দেখে ভয় পেয়ে দুই সন্ত্রাসী সারেন্ডার করে।

মহড়ায় আরো দেখানো হয়, সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে বেইসমেন্ট-২-এ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় কুক হাউসে আগুন লেগে যায়। বসুন্ধরার ফায়ারফাইটাররা দ্রুত আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন নেভাতে সক্ষম হন তাঁরা। পরে বসুন্ধরার রেসকিউ টিম আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনা দেখিয়ে মহড়া শেষ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিডিএল মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মেজর মো. রবিউল ইসলাম (অব.) বলেন, ‘আপনারা দেখছেন সারা বিশ্বে ও দেশব্যাপী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হচ্ছে। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই আজকের মহড়ার আয়োজন। বসুন্ধরা সিটির সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে যেন অন্যদের আগেই আমরা লিড নিতে পারি। এ জন্যই আমরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও অগ্নিনির্বাপণ—এ দুটোকে সামনে রেখে এ মহড়া করেছি। আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটি আছে। ডগ স্কোয়াড আছে।’

মার্কেটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে এই ডগ স্কোয়াড কিন্তু প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে যাচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি আছে। আল্লাহ না করুন ওই রকম যদি কোনো দুর্যোগ আসে আমরা মোকাবেলা করতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights