ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫১ কেন্দ্র, থাকবে ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর প্রতিনিধি

কাল গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রস্তুত রয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। প্রতিটি কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। গতকাল রাতে শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণাও। ভোট নিয়ে শঙ্কা না থাকলেও নানা অভিযোগ রয়েছে। ভোটে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে কমিশন। জানা গেছে, এ নির্বাচনে ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) বলে চিহ্নিত করেছে কমিশন। বাকি ১২৯ কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সিটির চারভাগের তিনভাগ ৭৩ দশমিক ১২ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিবেচনায় নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে গাজীপুর সিটির ভোটের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি জানান, প্রার্থীদের নানা অভিযোগ থাকলেও কোনো ধরনের শঙ্কা নেই। বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা করা হলেই ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তবে শিল্প এলাকায় নানা ধরনের মানুষের বসবাসের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার কথা মাথায় রেখে এবার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকছে। মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রচার শেষ হয়েছে গত রাতে।

গাজীপুর সিটি ভোট দেখভালের দায়িত্বে থাকা এ নির্বাচন কমিশনার জানান, সবাই জিততে চান; সেভাবে তারা প্রচারণা চালান ও বক্তব্য দেন। কিন্তু ইসির কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আমাদের যত রকম ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার সেগুলো আমরা কমপ্লিট করেছি। ইভিএম প্রস্তুত, বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। বৃহস্পতিবার (কাল) সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হবে।

তিনি জানান, প্রিজাইডিং অফিসার ও ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সদস্যরা একসঙ্গে কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে কোনো খাবার খাবেন না, নিজেরা নিজেদের খাবার জোগাড় করে নেবেন। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ব্যাটালিয়ন আনসার চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। তদারকিতে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম থাকবে। ১১ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি ভোটারের এ সিটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৪৮০টি। এবার তিন-চতুর্থাংশ ভোট কেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, সব কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প এলাকায় কোথাও কোথাও অপরাধপ্রবণতা বেশি থাকে। তবে এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র (দুই-তৃতীয়াংশের বেশি)। ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৪২৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছিল ইসি।
কোনো থ্রেট নেই, বিশৃঙ্খলা হলেই ব্যবস্থা : ভোট সামনে রেখে কোনো ধরনের শঙ্কা না থাকলেও প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা করলেই আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সতর্ক করে দেন এ নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, গাজীপুর শিল্প এলাকা হওয়ায় অন্যান্য এলাকার লোকজনও রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের বসবাস। কিছু মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতাও বেশি। নির্বাচনী পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, কোনো থ্রেট নেই। থ্রেট না থাকলেও প্রিভেন্টিভ মেজার হিসেবে যেহেতু শিল্প এলাকা তাই দুষ্কৃতকারী বা অসৎ উদ্দেশ্য যাদের থাকে তারা যেন অন্যায় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে তাই অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী হাকিম থাকবেন ৭৬ জন, বিচারিক হাকিমও থাকবেন। র‌্যাবের ৩০টি টিম থাকবে। বিজিবি থাকবে ১৩ প্লাটুন আর ২০ জন বেশি থাকবে। এ ছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশের ১৯টি ও মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবে।

মো. আলমগীর বলেন, প্রতিটি কেন্দ্র ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ভোটের পরিস্থিতি দেখবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরা। এ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রার্থীদের সর্বশেষ প্রচারণা : গতকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার শেষ দিনে মাঠ-ঘাট চষে বেড়িয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এখন ভোট কেন্দ্রগুলোতে এজেন্ট নিয়োগে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে প্রার্থীদের। আজ রাত ফুরালেই কাল ভোট। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন ভোটাররা। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৮ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ জন এবং হিজড়া ভোটার ১৮ জন। গতকাল সকালে নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান।

জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন গতকাল সকালে ভোগড়া বাইপাস, বাসন সড়ক, মালেকের বাড়ী, বোর্ডবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। এ ছাড়া বিকালে নগরীর গাছা এলাকায় গণসংযোগ এবং সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে প্রচারণা চালান।

সকালে টঙ্গীর নিজ বাসভবনে ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। উন্নয়নবঞ্চিত গাজীপুর মহানগরীর উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি তিনি তুলে ধরেন ইশতেহারে। অন্যদিকে হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান নগরীর টঙ্গী পূর্ব ও টঙ্গী পশ্চিম, পুবাইল, সদর মেট্রো, সালনা, বাসন, গাছা, কাশিমপুর এবং কোনাবাড়ি এলাকায় ঝটিকা প্রচারণা চালান।

আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত ও মানবিক নগর গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গণফ্রন্ট মনোনীত মেয়র প্রাথী (মাছ প্রতীক) আতিকুল ইসলাম গতকাল দুপুরে নগরের চান্দনা চৌরাস্তায় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

বন্ধ থাকবে : কাল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ২৪ মে (আজ) রাত ১২টা থেকে ২৫ মে (কাল) রাত ১২টা পর্যন্ত যে কোনো ধরনের ভারী যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবন্ধী ভোটারদের সহযোগিতায় নিয়োজিত গাড়ি নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত পরিচয়পত্রধারী দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগে ব্যবহৃত যানবাহন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনী এলাকায় ২৩ মে ভোর ৬টা থেকে ২৭ মে দিবাগত মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন (লাইসেন্সধারী), বিস্ফোরক ও ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার, অস্ত্রশস্ত্র, তলোয়ার, বর্শা, বন্দুক, দা, ছোরা, কাঁচি, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন, আতশবাজি এবং পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এক কাউন্সলর প্রার্থীকে ইসিতে তলব : ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আজিজুর রহমানকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল ইসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে কাউন্সিলর প্রার্থীকে শোকজ করার কথা জানানো হয়। তাকে আজ বুধবার ২৪ মে সশরীরে এসে নির্বাচন কমিশনে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights