তিস্তার জন্য আশীর্বাদ তাপপ্রবাহ

নজরুল মৃধা, রংপুর
চলমান তাপপ্রবাহ তিস্তা নদীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশের মতো প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে পাশের ভারতেও। দাবদাহের ফলে হিমালয় পর্বতের জমাটবাঁধা বরফ গলতে শুরু করেছে। বরফগলা পানি ভারতের গজলডোবা বাঁধ হয়ে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টির পানিও আসছে তিস্তায়। ফলে এটা তিস্তার সেচ কমান্ড এলাকার কৃষকের জন্য শাপেবরে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলে তিস্তায় পানি থাকে আড়াই থেকে ৩ হাজার কিউসেক। এবার পানি পাওয়া যাচ্ছে ৬ হাজার কিউসেকের ওপরে। গতকাল তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কিউসেক পানি পাওয়া গেছে। ফলে এবার তিস্তা সেচ কমান্ড এলাকায় পানির খুব একটা সংকট নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেচ কমান্ড এলাকায় ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা প্রদানের কথা থাকলেও এ বছর সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার হেক্টর। এবার লক্ষ্যমাত্রার পুরোটাই পূরণ হয়েছে বলে দাবি করছে পাউবো। প্রকল্প এলাকায় সেচ দেওয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১৫ হাজার কিউসেক। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন প্রায় ১০ হাজার কিউসেক এবং নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন ৬ হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদের সময় ব্যারাজ পয়েন্টে কয়েক বছর ধরে পাওয়া গেছে মাত্র ২-৩ হাজার কিউসেক পানি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন।

শুকনো মৌসুম ও প্রচণ্ড খরায় তিস্তা একেবারে পানিশূন্য থাকার কথা থাকলে হিমালয়ে বরফগলা পানি এবং পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টির পানি তিস্তায় যোগ হওয়ায় বাংলাদেশ অংশে মোটামুটি পানি পাওয়া যাচ্ছে। যে পরিমাণ পানি তিস্তায় পাওয়া যাচ্ছে তার সবটুকই সেচ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সেচ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেট বন্ধ রেখে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ করায় মূল নদীতে প্রবাহ বন্ধ থাকলেও সেচ কমান্ডের ক্যানেলগুলো টইটম্বুর। ফলে চলমান দাবদাহ তিস্তার জন্য কিছুটা আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, তিস্তায় যে পরিমাণ পানি পাওয়া যাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে তিস্তা সেচ প্রকল্পে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে; যা ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হিমালয়ের বরফগলা পানি তিস্তায় প্রবেশ করায় সন্তোষজনক পানি পাওয়া যাচ্ছে। সেচের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূরণ হয়েছে। নদীতে পানি কম থাকলেও সেচের ক্যানেলগুলোয় পর্যাপ্ত পানি রয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights