নোয়াখালীতে থানায় অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৩

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ অস্ত্র লুট ও পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নাইম হোসেন (২১), ইমাম হোসেন ওরফে ইমন (২২) ও নাহিদুল ইসলাম (১৬)। তারা সবাই সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা।

শনিবার সকালে নিজ কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল্লাহ আল ফারুক। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ১০ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে সোনাইমুড়ীর বাইপাস বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গত ৫ আগস্ট সোনইমুড়ী থানায় হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামি নাইম হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে তার মোবাইল ফোনের ডায়াল লিস্ট পর্যালোচনা করে নিহত পুলিশ কনস্টেবল ইব্রাহিমকে হত্যার সাথে জড়িত আসামি ইমাম হোসেন ওরফে ইমনের হেফাজত থেকে নিহত পুলিশ কনস্টেবলের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় একই দিন সন্ধ্যার দিকে উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট এলাকা থেকে আসামি ইমাম হোসেন ওরফে ইমনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই সময় তার থেকে একটি টেকনো স্পার্ক মোবাইল জব্দ করা হয়। ওই মোবাইল ফোনের মেসেঞ্জারে ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তির আইডিতে পাঠানো ইমনের ঘটনার দিন পুলিশ হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক ভয়েস রেকর্ড পাওয়া যায়। এরপর হামলার পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে হত্যার সাথে জড়িত শিশু নাহিদুল ইসলামকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গ্রেফতারকৃত শিশু নাহিদুল জিজ্ঞাসাবাদে জানায়- আসামিরা গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ী থানায় হামলা ও সংঘাতে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তারা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশকে মারধর ও গুলি করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, চুরি ও সরকারি মালামালের ক্ষতিসাধানের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। আসামি নাইম হোসেন, ইমন পুলিশের সাথে সংঘাতে জড়িত বলে জানায় শিশু নাহিদুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, সোনাইমুড়ী থানায় আক্রমণ পরবর্তীতে প্রাণ ভয়ে জীবনরক্ষার্থে পলায়নরত পুলিশ সদস্যদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে থানার পিছনে সীমানা প্রাচীরের কাছে অপেক্ষা করছিল আসামিরা। পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিম নীল রংয়ের পুলিশের টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় সীমানা প্রাচীরের নীচ দিয়ে টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে বের হওয়ার সময় নাহিদুল তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাধা দেয়। এরপর এইতো পুলিশ বলে মারধর শুরু করে। সাথে সাথেই ইমাম হোসেন ইমন দৌঁড়ে হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। কনস্টেবল ইব্রাহিম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অপর আসামিরা সকলে একযোগে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পুরো শরীরে আরও উপর্যুপুরি আঘাত করে। গুরুতর আহতাবস্থায় এবং মৃত্যুন্মুখ জেনেও আসামি নাইম পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পকেট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও আইডি কার্ড ও টাকাসহ ম্যানিব্যাগ নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পুনরায় আসামিরা এসে উপর্যুপুরি আঘাত করে ইব্রাহিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে।

অপরদিকে, ঘটনার পরবর্তীতে আসামি ইমাম মোবাইল ও টাকা ভাগ চাইলে আসামি নাইম তাকে পরে যোগাযোগের মাধ্যমে দেবে বলে ইমনের মোবাইল নাম্বারে নিজ মোবাইল থেকে কল করে। কিন্তু মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় আসামি ইমাম হোসেন ইমনের মোবাইলে কল না গেলেও আসামি নাইম হোসেনের উল্লেখিত জব্দকৃত মোবাইলের ডায়াল লিস্টে আসামি ইমনের মোবাইল নাম্বারটি কল লিস্টে থেকেই যায়।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আরও বলেন, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পিত হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট ও প্রাথমিকভাবে সাক্ষ্যপ্রমাণ সম্বলিত। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।