বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা পৌরসভা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে চলতি বছরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে হাসপাতাল গুলিতেও স্থান সংকুলান দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ডেঙ্গু সংক্রমণের নিরিখে ২০১৯ সালের ভয়াবহতাকেও নাকি ছাপিয়ে যেতে পারে এবার।

সেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। এমনকি ওপার বাংলার ডেঙ্গু এপার বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গ) ঢুকছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র তথা পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ।

আর সেদিকে তাকিয়েই কলকাতা পৌরসভার পক্ষ থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে আবেদন জানানো হচ্ছে যাতে স্বাস্থ্য দফতর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায় যে বাংলাদেশ থেকে আগত নাগরিকদের ভারতে প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশন পয়েন্টে ডেঙ্গু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। না হলে, বাংলাদেশের মতো এরাজ্যেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের এরাজ্যে প্রবেশ করতে হলে বাধ্যতামূলক হতে পারে ডেঙ্গু পরীক্ষা।
মঙ্গলবার কলকাতা পৌরসভায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করে অতীন ঘোষ জানান, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশে ব্যাপক ডেঙ্গু হচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ডেঙ্গুতে জর্জরিত। অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বাংলাদেশের সাথে আমাদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেখানকার মানুষ প্রতিদিন বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে এখানে আসছে। মানুষের শরীর হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাসের ক্যারিয়ার। কোন মানুষ হয়তো ডেঙ্গু নিয়ে এখানে আসছেন। এইরকম একটি লোককে যদি এখানকার এডিস মশা কামড়ায় তাতে এখানকার আরো বেশ কিছু মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হবে। সেই কারণেই আমরা চাইছি যে অভিবাসন পয়েন্টে একটা পরীক্ষা হয়। এদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুব্রত রায় রাজ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে একটা চিঠি দিবেন। যাতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে কথা বলে ইমিগ্রেশন পয়েন্টে একটা ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তাহলে এই সংক্রমণটা সহজে ছড়াবে না।’

তিনি জানান, ‘ইতিমধ্যে ফিভার সার্ভেলেন্স করা হচ্ছে। যারা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কি কারণে জ্বর, আগে এই ধরনের জ্বর হয়েছিল কি না, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল বুধবারই জরুরি বৈঠক ডেকেছেন কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই বৈঠকে পৌরসভার বিভিন্ন বিভাগের মেয়র পারিষদ সহ মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

সূত্রে খবর, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গোটা রাজ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলাগুলিতে মারাত্মকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তদের ৬৫ শতাংশই গ্রামের বাসিন্দা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে রোগীদের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাচ্ছে, সাড়া দিতে পাচ্ছেন না চিকিৎসায়। আর তাতেই রোগীর মৃত্যু ঘটছে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্লাটিলেটের ঘাটতি ‍রুখতে প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন গাইডলাইন জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights