বিডিবিএল সোনালী, বেসিক সিটিতে আরও দুই দুর্বল ব্যাংক হচ্ছে একীভূত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে এবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে যাচ্ছে আরেক রাষ্ট্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বিডিবিএল। আর বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুর্বল বেসিক ব্যাংক। গতকাল সোনালী ও বিডিবিএল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর বিডিবিএল অধিগ্রহণের বাকি কাজ শুরু করবে সোনালী ব্যাংক। এ বিষয়ে বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাবিবুর রহমান কাজী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএল একীভূতকরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পর্ষদকে জানানো হয়েছে। এখন পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী একীভূত প্রক্রিয়া হবে। সরকারের উচ্চপর্যায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ইঙ্গিত পেয়ে বিডিবিএলের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা, যেটা গতকাল অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বিডিবিএলকে সোনালীর সঙ্গে একীভূত করতে পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিয়েছে। ঈদের পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সমঝোতা চুক্তি করব। একীভূত প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হবে, সমঝোতা চুক্তিতে তার বিস্তারিত থাকবে। এদিকে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, স্বতঃপ্রণোদিত একত্রীকরণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নীতিসহায়তা অনেক বেশি পাওয়া যাবে, তাই কোনো দুর্বল ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যায় কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। যেটাই করি না কেন, আগে ওই দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠন করব এবং তিন বছর বা তার বেশি সময় পরে দুই ব্যালান্সশিট এক করব। এটাই আমাদের ইচ্ছা। পলিসিতে বলা আছে ব্যাংক পুনর্গঠনে তিন বছর সময় পাব। ভালো পথে এই তিনটি বছর গেলে আমি আশাবাদী সময় আরও বাড়বে। অর্থনীতিবিদরা গত কয়েক বছর ধরেই দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে ঝুঁকিতে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন সূচকের মানদণ্ডে আর্থিক স্বাস্থ্য নিরূপণ করা হয়। কাক্সিক্ষত মানদণ্ডের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোকে দুর্বল হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংক টেনে তুলতে শেষ পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা করেছে। সরকারও তাতে সায় দিয়েছে। একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালাও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা না হলেও ধারণা দেওয়া হয় যে, ব্যাংকগুলো নিজেদের পছন্দে বাছাই করতে পারবে। এর আগে দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করার চুক্তি করেছে শরীয়ভিত্তিক ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights