ভেসপায় ঘুরে বেড়ান জ্যাক, পালন হয় জন্মদিন!

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা
ভেসপা নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক। ডাক দিলেন জ্যাক বলে। সে এক লাফে ভেসপার সামনের খালি অংশে উঠে বসল। ভদ্রলোক ভেসপায় চড়ে নগরী ঘুরলেন। এরপর বাসার পাশের দোকানের সামনে এসে থামলেন। জ্যাককে নিয়ে পাউরুটি খেয়ে ফিরলেন বাসায়। কুমিল্লার কালীবাড়ির এলাকায় এটি প্রায় প্রতিদিনের দৃশ্য। জ্যাক আর তার মালিক পলাশের এ নগর ভ্রমণের গল্প স্থানীয়রা জানেন। জ্যাক হলো পলাশের কুকুরের নাম। কুমিল্লার পুরাতন চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা বিশিষ্ট নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডা. রতন কুমার দাস চৌধুরী বলেন, প্রাণীর প্রতি প্রেম মানবিক গুণাবলির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। পলাশ আমার প্রতিবেশী। তাদের পরিবারের কুকুরের প্রতি ভালোবাসা সবার নজর কাড়ে। জানা যায়, নগরীর চৌধুরীপাড়া কালিবাড়ির গেটের পাশের বাড়ির মালিক অমূল্য ভূষণ রায়। বাড়ির নাম তাই অমূল্য ভবন। তিনি পরিবহন ব্যবসায়ী ছিলেন। কুকুরের প্রতি ছিল তার অগাধ মমতা। তার ছেলে অভিজিত রায় পলাশও বাবার কাছ থেকে কুকুরকে যত্ন করতে শিখেন। তিনি জানান, শীতে কুকুরকে দুই তিন দিন পর এবং গরমের দিনে প্রতিদিন সাবান শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। ১৫ দিন পর পর চিকিৎসক দেখান।

কুকুরের ঘুমানোর জন্য রয়েছে আলাদা খাট। তাকে দুধ ভাত আর ব্রয়লার মুরগি রান্না করে খাওয়ানো হয়। প্রতি বছরের ৩ মার্চ তার জন্মদিন পালন করা হয়। পরিবারের সদস্যদের এই কুকুরপ্রীতির গল্প মহল্লার সবার মুখে মুখে। তবে প্রকাশ্যে না হলেও কেউ কেউ বেশ বিরক্তিও প্রকাশ করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ভেসপায় কুকুর নিয়ে চলার সময় পথচারীরা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন। কোথাও থামলে বা জ্যামে পড়লে রাস্তার কুকুররা জ্যাকের আশপাশে ঘুরাঘুরি করে। আর হয়তো মনে মনে ভাবে- তুমি কত ভাগ্যবান জ্যাক! এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় পলাশের পাশে এসে দাঁড়ায় জ্যাক। এক সময় পলাশের কোলে উঠে বসে। আপ্যায়নের জন্য আনা বিস্কুটেও ভাগ বসায়। অভিজিত রায় পলাশ বলেন, বাবার কুকুরের প্রতি মমতা দেখে তিনিও আগ্রহী হন। তাদের পরিবারের সবাই কুকুর পছন্দ করেন। তিনি হাতে ভেসপার চাবি নিলে কুকুর কীভাবে যেন বুঝে যায়। এসে ভেসপায় উঠে বসে। শহরে কয়েটি রাউন্ড দিয়ে এনে মহল্লার দোকানের পাউরুটি খাইয়ে দিলে শান্ত হয়। পিংকি ও জনিসহ কয়েকটি কুকুর পালন করেন তারা। সাত/আট বছরের বেশি কোনোটি বাঁচে না। জ্যাক দেশি প্রজাতির। ছোটরা এলাকা থেকে ছানা অবস্থায় এনেছেন। এখন এটির বয়স চার বছর। বাসার নিরাপত্তায় জ্যাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি জানান, কুকুরকে পরিচ্ছন্ন রাখলে তার থেকে কোনো রোগ হওয়ার আশঙ্কা নেই। দীর্ঘ ৪০ বছরে আমাদের কুকুরের জন্য কোনো সমস্যা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights