ভ্যাকসিন নেই ভোগান্তি
কাজী শাহেদ, রাজশাহী
কুকুর ও বিড়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন তিন শতাধিক মানুষ ভ্যাকসিন নিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) আসেন। কিন্তু এ হাসপাতালে কোনো ভ্যাকসিন নেই। চরম ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা দরিদ্র রোগীরা। জীবন রক্ষায় তাদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভ্যাকসিন। এ সুযোগে অসাধু দোকানিরা ৫০০ টাকার ভ্যাকসিন ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন। অনেক সময় বেশি দামেও পাওয়া যাচ্ছে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ। সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘এটি পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ আছে। কিন্তু এ পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছে। অফিশিয়ালি চিঠি প্রদান করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন খুব শিগগিরই এটির একটি সমাধান হবে।’
গত কয়েক মাস থেকেই জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনের চাহিদা বাড়ছিল রাজশাহীতে। কিন্তু বিপরীতে চাহিদার তুলনায় দিন দিন কমে যাচ্ছিল সরবরাহ। রোগীর চাপ সামাল দিতে না পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি ভ্যাকসিন চারজনকে ভাগাভাগি করে দিচ্ছিল। কিন্তু গত ৩ জানুয়ারি থেকে একদমই বন্ধ হয়ে গেছে ভ্যাকসিন। দুই সপ্তাহ আগে কুকুরের কামড়ে আহত হয় রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল আওয়াল। পরে রবিউলের দরিদ্র কৃষক বাবা আক্রান্ত অন্য চারজনের সঙ্গে ভাগ করে ছেলেকে এক ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছেন।
নওগাঁর মান্দা থেকে আসা কাওসার রহমান জানান, রাতে বাড়ি ফেরার সময় কুকুর তাকে কামড় দেয়। পরের দিন সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। কিন্তু এখানে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেই। চিকিৎসকরা তাকে জানান, বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। বাধ্য হয়ে কয়েক দোকান ঘুরে ৮০০ টাকায় ভ্যাকসিন কিনেছেন।
গত কয়েক মাস থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনের ব্যাপক সংকট চলছিল। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে চাহিদা ছিল ২৮৬ ভায়েল, কিন্তু সরবরাহ ছিল ২১৩ ভায়েল। অক্টোবরে রোগীর ভিড় বেড়ে যায়। রামেকের চাহিদা বেড়ে হয়ে যায় ৪৫০ ভায়েল। সেখানে সরবরাহ করা হয়েছিল মাত্র ২৪১ ভায়েল। নভেম্বরে চাহিদা আরও বেড়ে যায়। চাহিদা ৫০০ ভায়েল হলেও সরবরাহ ছিল মাত্র ১০৯ ভায়েল।
এরপর ডিসেম্বরে রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ে। হাসপাতালের চাহিদা ছিল ৫১০ ভায়েল। সেখানে সরবরাহ করা হয় ২৪৯ ভায়েল। কোনো উপায় না দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি ভায়েল চারজনকে ভাগাভাগি করে দিতে থাকে। কিন্তু ৩ জানুয়ারি থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাহিদার কথা জানিয়ে জরুরি চিঠি পাঠায় ঢাকায়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জবাব এখনো পাননি বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন রামেক মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস।