মশায় অতিষ্ঠ জনজীবন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পরিচ্ছন্ন নগরীর পরিচিতি পেলেও রাজশাহীতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ পুরো নগরবাসী। শুধু সন্ধ্যা বা রাতই নয়, দিনেও মশারি টানিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে থাকতে হচ্ছে পদ্মা পাড়ের মানুষকে। এতে শহরজুড়ে চালানো পরিচ্ছন্নতার প্রকৃত কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত ওষুধ ছিটানো ও স্প্রে করার দাবি করা হলেও নগরবাসীর অভিযোগ, মশার উপদ্রব থেকে নাগরিকদের স্বস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে করপোরেশন। যদিও মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকেই আরও বাড়তি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে সিটি করপোরেশন।

করপোরেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মশা নিয়ন্ত্রণে সাধ্য অনুযায়ী তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট কোনো সময় নয়, বরং মশা নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়েই নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। উড়ন্ত মশা নিধনের জন্য ৩০টি ওয়ার্ডেই ফগার মেশিনের মাধ্যমে স্প্রে করা হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন ড্রেনে নিয়মিত লার্ভিসাইড (লার্ভা মারার ওষুধ) ছিটানো হয়। ড্রেনগুলোও প্রতিনিয়ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।
তবে নগরীর মিয়াপাড়া, টিকাপাড়া, হড়গ্রাম বাজার, মোল্লাপাড়া, মহিষবাথান, ছোট বনগ্রাম, দড়িখরবোনা, মালদা কলোনি, শিল্পীপাড়া, মথুরডাঙা, সপুরা, দাশপুকুর, ভাটাপাড়া, কাদিরগঞ্জ, হেতেম খাঁ লিচু বাগান, পাঠানপাড়া, কয়েরদাঁড়া, সাধুর মোড়, মেহেরচন্ডী, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাজার, তালাইমারী শহীদ মিনার, কাজলা, কেদুর মোড়, শিরোইল, সাহাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার ভিতরের পাড়ামহল্লায় ঘুরে ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ দিনের বেশি সময় তারা এলাকায় ফগার মেশিনের শব্দ শুনতে পাননি।

কোনো কোনো এলাকায় ফগার মেশিনের কার্যক্রম দেখা গেলেও তা সীমিত ও নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগের অভিযোগ আছে। শুধু তাই নয়, ফগার মেশিনে ওষুধের পরিবর্তে কেরোসিন ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। তাদের যুক্তি ফগার মেশিনে যদি আসলেই কার্যকর কিছু ব্যবহৃত হয়, তবে সেটি প্রয়োগের পরেও মশার এমন উপদ্রপ কেন?

জানা গেছে, ছুটির দিনগুলোয় শহরের টি-বাঁধ, আইবাঁধ, মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেনসহ নদীর পাড়ে ভিড় করেন নগরবাসী। নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা ওইসব পার্কে মশার কারণে সন্ধ্যার পর কেউ টিকতেই পারেন না। সম্প্রতি সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চে পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন সাদেকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নদীর পাড়ে যে কোনো স্থানে একটু বসলেই যেন হাজার হাজার মশা। কিছু কিনে খেতে গেলে তার মধ্যেও মশা বসছে। মশার অসহ্য যন্ত্রণায় সন্ধ্যার পর আর সেখানে থাকতে পারলাম না। মশা তাড়িয়ে কতক্ষণ থাকা যায়! একটু বসামাত্রই মশা কামড়ে হাত-পা ফুলিয়ে ফেলেছে।’

মহানগরীর ডাবতলা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ। শহরের অনেক এলাকায় মশার যন্ত্রণায় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে পারছে না। শুধু রাত বা সন্ধ্যা নয়, দিনেও মশার উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ।’

এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটি করপোরেশন তার সামর্থ্য অনুযায়ী সবই ঢেলে দিচ্ছে। রাসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু বলেন, ‘মশা কখনো নিধন করা যায় না, নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। উড়ন্ত মশা নিধনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডেই ফগার মেশিনের মাধ্যমে স্প্রে করা হয়। সব ওয়ার্ডের বিভিন্ন ড্রেনগুলোতে নিয়মিত লার্ভিসাইড (লার্ভা মারার ওষুধ) ছিটানো হয়। মশা যেন ডিম পাড়তে না পারে, সেজন্য ড্রেনগুলোও প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা হয়। মশা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করে যাচ্ছি।’

এদিকে কীটনাশক কেনার আগে করপোরেশনকে কীটতত্ত্ববিদের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি আহমেদ সফি উদ্দীন বলেন, ‘আমরা অতীতে দেখেছি, মশা নিধনের কীটনাশক বা কেমিক্যাল কেনার আগে কীটতত্ত্ববিদদের মতামত নেওয়া হতো। নানা কার্যক্রম চালানোর পরেও মশা নিধন না হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে- এটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কোনো এক্সপার্ট সিটি করপোরেশনে নেই। আমার জানা নেই, তারা যে কীটনাশক ব্যবহার করে তা কেনার আগে কোনো বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে কি না। তারা এটি যদি না করে থাকেন, তবে এটি অর্থের অপচয়ই শুধু নয়, নাগরিকদের প্রতি এক ধরনের নির্যাতন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights