যে আসনে বসে মিমের পরীক্ষা দেওয়ার কথা, সেখানে ফুলের তোড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
মিম আজ নেই। তবে তার পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সিটটিতে রাখা ছিল খাতা ও একটি ফুলের তোড়া। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মায়েশা ফওজিয়া মিম গত ৩০ অক্টোবর বাসচাপায় নিহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। গত ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মিম। কিন্তু মঙ্গলবারের দ্বিতীয় পরীক্ষায় আর অংশ নিতে পারেননি তিনি।
মঙ্গলবার ছিল হিস্ট্রি অব দ্য ইমার্জেন্স অব ইনডিপেনডেন্ট বাংলাদেশ বিষয়ের পরীক্ষা। পরীক্ষার হলে তার আসনটি খালি অবস্থায় ছিল। যেখানে তার স্মৃতিতে একটি ফুলের তোড়া ও বরাদ্দকৃত পরীক্ষার উত্তরপত্র ছিল। ফুলের তোড়ায় লেখা ছিল ‘মৃত্যু তোমায় কেড়ে নিতে পারে কিন্তু স্মৃতিতে তুমি চিরকাল অমর থাকবে।’ সহপাঠী ও শিক্ষকরা এমন শূন্যতার আসন খালি দেখে বারবার তাকে স্মরণ করে ভেঙে পড়েন।
নিহত ফওজিয়া মিমের সহপাঠী জাহিদ হাসান জানান, তার সাথে পরীক্ষা দিলাম সেদিন। আজ সে নেই ভাবতে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মনটা ভারী হয়ে উঠেছে। প্রথম পরীক্ষা সে দিয়েছিল। পরেরটা আর দিতে পারলো না। একটা জীবন্ত প্রদীপ হঠাৎ নিভে গেলো ভাবতেও পারছি না। পরীক্ষা দিয়েছি আর তার শূন্যতা অনুভব করেছি। মনে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
মিমের শিক্ষক আহসানুল হক জানান, মিম আমাদের বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। আজ মিমের দ্বিতীয় পরীক্ষা ছিল। কিন্তু সে আমাদের মাঝে নেই। তার চেহারাটি বারবার ভেসে উঠছে। সে আমার সন্তানের মতো, সন্তান হারানো কষ্টের। পরীক্ষা শেষে আমাদের বিভাগ থেকে তার জন্য মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক আইয়ুব আলী শিক্ষার্থী মিমের স্মৃতিচারণ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজ মিমহীন আরেকটি চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হলো! তার জন্য বরাদ্দকৃত খাতাটি পড়ে রইলো শেষ অব্দি! যতক্ষণ ডিউটি দিচ্ছি, নিষ্পাপ সেই মুখটি বারবার মনে ভেসে উঠছে। আল্লাহ মিমকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত করুন।’