রাবির হল থেকে শিক্ষার্থী নামিয়ে দেয় ছাত্রলীগ, দায়িত্ব নিতে নারাজ প্রাধ্যক্ষ

রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে সিট দখলে নিয়ে শিক্ষার্থী নামিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী বৈধ সিট ফিরে পাওয়ার আবেদন করলে দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন প্রাধ্যক্ষ।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে আবাসিক শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম।

রাকিবুলের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর অর্থসংকটে এক বছর পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। মেসে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ না থাকায় ছয় মাস ঘুরে হলে আবাসিকতা পেয়েছেন ভুক্তভোগী। গত ১০ জানুয়ারি থেকে হলের ১৩০ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন। কিন্ত ১৬ জানুয়ারি মধ্যরাতে ছাত্রলীগ নেতা সোহান তার সিট দখল করে এবং তার বিছানাপত্র নিচে ফেলে অন্য এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সেই সিটে তুলে দেন। বিষয়টি পরদিন প্রাধ্যক্ষকে জানালে তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব সিটে তুলে দেয়া, সিটে থাকতে পারবে কিনা সেই দায়ভার আমার না। এখন তোমার কোন বড় ভাইয়ের সাপোর্ট নিয়ে সিটে থাকো। সিট দেয়ার দায়িত্ব আমার, সিট রক্ষার দায়িত্ব তোমার।’ এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রাধ্যক্ষকে একটি অভিযোগপত্র দেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে একাধিক ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাঁড়া দেননি ছাত্রলীগ নেতা সোহান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর হলগুলোতে সিট দখল বেড়েছে। গত কয়েকমাসে এ বিষয়ে ডজনখানেক অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শহীদ হবিবুর রহমান হলেই একাধিক সিট দখলেন অভিযোগ রয়েছে হল ছাত্রলীগের আরেক নেতা মিনহাজ ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে সোহান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী। সিট দখল নিতে হলের কক্ষগুলোতে নিয়মিত অভিযান এবং শিক্ষার্থীদের সিট ছাড়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, সিট বরাদ্দের দায়িত্ব হল প্রশাসনের। ছাত্রলীগের এখানে সিট দখলের অধিকার রাখে না। অভিযোগ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রাধ্যক্ষের অপারগতা প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনেকে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের কথাও জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ খান বলেন, শিক্ষার্থীদের সিটে ওঠানো এবং তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব হল প্রশাসনের। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিতে পারা খুবই হতাশাজনক। হলে সিট দখলসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও তেমন উদ্যোগ নেই। ফলে প্রতিনিয়ত এ সমস্যা বাড়ছে।

সার্বিক বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষার্থী বরাদ্দ পাওয়া কক্ষেই থাকবে। দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগটি পুরোপুরি সঠিক নয় বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights