লোকসভার আসন পাওয়া নিয়ে দুই জোটের পাল্টাপাল্টি দাবিতে সরগরম রাজনীতি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা
ভারতের সাত দফার লোকসভা নির্বাচনের দুই দফার ভোটগ্রহণ শেষ। প্রথম দফায় গত ১৯ এপ্রিল ১০২ কেন্দ্রে এবং দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৮ কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম দুই দফায় ইতিমধ্যে ১৯০ আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। তৃতীয় দফার ভোট আগামী ৭ মে, চতুর্থ দফা ১৩ মে, পঞ্চম দফা ২০ মে, ষষ্ঠ দফা ২৬ মে এবং সপ্তম ও শেষ দফার ভোট ১ জুন। গণনা আগামী ৪ জুন।

কিন্তু ইতিমধ্যে কে কয়টি আসন পাবে তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে জোর হিসাব নিকাশ। ভারতের মোট লোকসভা আসন ৫৪৩টি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২ আসন। চলমান এই নির্বাচনে ৪০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। তবে আসন জয়ের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা না থাকলেও বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রধান লক্ষ্য এনডিএ জোটকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা।

দ্বিতীয় দফার নির্বাচন শেষেই দুই দিন আগে গত রবিবার মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে একটি নির্বাচনী প্রচারণা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ফুটবলের ভাষায় বলতে গেলে আমরা ২-০ তে এগিয়ে রয়েছি।’ মঙ্গলবার আরও আত্মবিশ্বাসী দেখা গেল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। এদিন আসামে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে মন্ত্রিসভার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড শাহ বলেন, সাত দফায় নির্বাচনের মধ্যে ইতিমধ্যে দুই দফা নির্বাচন শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দলের যে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন- তাতে পরিষ্কার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং আমাদের শরিক দলগুলো মিলে ১০০ এর বেশি আসনে আমরা এগিয়ে আছি। আমাদের বিশ্বাস, ৪০০ আসনে জয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা রেখেছি, তার দিকে এগিয়ে চলেছি।
তার দাবি, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্রিশগড়, উত্তরাখন্ড’- এইসব রাজ্যগুলোতে তারা বড় সংখ্যায় নির্বাচনী সাফল্য পেতে চলেছে। এর পাশাপাশি কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা, তামিললাড়ু থেকে প্রথম দিকের যে ট্রেন্ড তারা পেয়েছে তাতে দক্ষিণ ভারতেও বিজেপি খুব ভালো সাড়া পাচ্ছে।

তবে অমিত শাহ বা মোদির এই দাবি কিছুতেই মানতে রাজি নয় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারা। জোটের অন্যতম শরিকদল দল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধী সোমবার ছত্রিশগড়ের বিলাসপুরে এক প্রচারণা থেকে বলেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদি প্রথমে বলতেন এবার ৪০০ পার। আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন। কিন্তু এখন কি বলে? এখন ১৫০ আসনের কথাও বলে না। কারণ উনি বুঝে গেছেন ১৫০ আসনে জেতাও সম্ভব নয়। উনি দেশবাসীর পালস বুঝে গেছেন।’

তৃণমূল কংগ্রেসও মোটেই বিজেপির এই দাবি মানতে রাজি নয়। দলের প্রধান মমতা ব্যানার্জির দাবি, এই নির্বাচনে বিজেপি ২০০ আসন পার হবে কিনা তাতেও সন্দেহ রয়েছে। মমতার কটাক্ষ ‘ওরা (বিজেপি) বলছে এবার ৪০০ কিন্তু আমি বলব আগে ২০০ পার কর, তারপরে সাঁতার কাটবি।’

মঙ্গলবার মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ এলাকায় প্রচারণায় মমতা বলেন, মালদা জেলায় যে দুটো লোকসভার আসন (মালদা উত্তর ও মালদা দক্ষিণ) রয়েছে এই দুটো আসনে আজ পর্যন্ত তৃণমূল কোনদিনই জিততে পারেনি। এবার কি বদলানো যায় না? এবার কি আমাদের দেবেন না? আমাদের লড়াই তো দেখেছেন। দিন-রাত এক করে দিয়ে আমরা লড়ছি।

দিল্লিতে সরকার পরিবর্তনের ডাক দিয়ে মমতা বলেন, চলুন এবার পাল্টাই, দিল্লির সরকার বদলাই, দিল্লিতে পরিবর্তন চাই। যারা বিজেপিকে হারাতে পারে তারা হলো তৃণমূল এবং তৃণমূলই বিজেপিকে হারাবে এবং দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপিকে বিদায় দেবে।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, বিজেপি দাবি করছে এই নির্বাচনে তারা ৪০০ এর বেশি আসন পাবে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের পর তারা আর এই স্লোগান দিচ্ছে না। বিজেপি এবারের নির্বাচনে ৪০০ আসনেই হারবে।

উল্লেখ্য, শেষবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ১৯০ আসনের মধ্যে ৯৩ আসনে জিতেছিল বিজেপি। ওই নির্বাচনে গোটা দেশে ৩৫৩ আসনে জয় পায় এনডিএ জোট, এর মধ্যে বিজেপি একাই ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। তার আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে এনডিএ জোট পায় ৩৩৬ আসন, বিজেপি একাই জয় পায় ২৮২ আসনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights