হালদায় ‘নমুনা ডিম’ ছেড়েছে মা মাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:

হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউস) দ্বিতীয়বারে মত নমুনা ডিম ছেড়েছে। গত শনিবার ও রবিবার বিভিন্ন সময়ে প্রতিজন ডিম সংগ্রহকারী ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম করে সংগ্রহ করেন। এর আগে গত ১৮ মে চলতি মৌসুমে হালদা নদীর হাটহাজারীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম ছাড়ে।

জানা যায়, মৌসুমের এপ্রিল-মে-জুন মাসের জো’তে ডিম ছাড়ে। চলতি মৌসুমে অন্তত পাঁচটি জো শেষ হয়। কিন্তু ডিম দেয়নি মা মাছ। গত ১৪ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত চলছে ৬ষ্ঠ জো। এই জোতে গত দুই দিনে সামান্য পরিমাণ নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এর আগে গত ১৮ মে হালদা নদীর হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাস মুন্সির হাট, মাছুয়াঘোনা, আমতুয়া ও গড়দোয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট এলাকায় বেশ কিছু নমুনা ডিম পাওয়া যায়। কয়েকজন সংগ্রহকারী ২ থেকে ৩ গ্রাম পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করে। তবে অমাবস্যার জো, মেঘের গর্জন ও বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল না নামার কারণে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়েনি। তাছাড়া, এবার তীব্র দাবদাহ, পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণেও হালদার মা মাছ ডিম ছাড়তে দেরি করে।

প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, এখন জুন মাসের শেষ জো চলছে। গত কয়েকদিন ধরে হালকা-ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজন কিছু নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন। তাই আমরা জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে অপেক্ষা করছি। এবার প্রায় ৫০০ নৌকা নিয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ ডিম সংগ্রহকারী মা মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, গত কয়েকদিনে বর্ষণে হালদা নদীতে মা মাছ কিছু নমুনা ডিম ছেড়েছে। প্রতিজন ডিম সংগ্রহকারী ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করে। তবে আজ সোমবার এবং কাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জো চলছে। তিনি বলেন, এবার ঘূর্ণিঝড়, তীব্র গরম, পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক নানা কারণে এবার মা মাছ উপযুক্ত পরিবেশ পায়নি। ফলে বিলম্বেই ডিম ছাড়ছে। বৃষ্টি হলে পানিতে লবণাক্ততার হার কমবে।

চবি হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, হালদা নদীতে ২০২২ সালে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল ৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০২১ সালে সংগ্রহ করা হয় ৮ হাজার ৫০০ কেজি, ২০২০ সালে সংগ্রহ করা হয় ২৫ হাজার ৫০০ কেজি।

নদীর মা মাছ রক্ষা ও অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে নৌ পুলিশ ১০ কিলোমিটার এলাকায় স্থাপন করেছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। একই সঙ্গে রেণু পোনা ফোটানো হ্যাচারিতেও সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে ডিম সংগ্রহ ও রেণু উৎপাদন কার্যক্রম তদারকি করা হবে। সংগ্রহ করা ডিম প্রক্রিয়াকরণে প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুটি উপজেলার চারটি সরকারি হ্যাচারি ও শতাধিক মাটির কুয়া। হালদা নদীর কাগতিয়ার আজিমের ঘাট, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম গহিরা অংকুরি ঘোনা, বিনাজুরী, সোনাইর মুখ, আবুরখীল, খলিফার ঘোনা, সত্তারঘাট, দক্ষিণ গহিরা, মোবারকখীল, মগদাই, মদুনাঘাট, উরকিচর এবং হাটহাজারী গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, সিপাহির ঘাট, আমতুয়া, মার্দাশা ইত্যাদি এলাকায় ডিম বেশি পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights