জবি ক্যাম্পাস খুললেও নতুন বছরে ফিরছেন না যারা!

দীর্ঘ ১০ দিনের শীতের ছুটির পরে আজ রবিবার খুলেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। তবে প্রিয় এই ক্যাম্পাসে আর ফেরা হচ্ছে না অনেক শিক্ষার্থীর। তারা হারিয়ে গেছেন। চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

তাদের আর দেখা যাবে না টিএসসিতে, কাঁঠাল তলায় কিংবা শান্ত চত্বরের আড্ডায়।

তাদের মধ্যে একজন উম্মে নিসা জীম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এই শিক্ষার্থী আর বেঁচে নেই। কিডনিজনিত রোগে গত বছরের ১৩ জানুয়ারি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বাবা-মায়ের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে দেয় এক অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ। ফুরিয়ে যায় তার জীবনের আলো।
এরপর ৪ মে তারিখে এক সাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন সাদিকুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার শিক্ষার্থী ছিলেন।

ঠিক চার দিন পরই ৮ মে সবাইকে ছেড়ে পরপারে চলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ তম শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অংকন বিশ্বাস। প্রেমিকের বাসায় বিষপানে অসুস্থ হওয়ার পর প্রায় দুই সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তিনি। অংকনের মৃত্যুতে শোকে স্তম্ভিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

অংকনের মৃত্যুর দুই মাস শেষ না হতেই ১৭ জুলাই তারিখে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মামুন। তিনি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহেশমারা ইউনিয়নে বাসিন্দা ছিলেন। পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারান মামুন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও ছিলেন জীবনযুদ্ধ হার না মানা এ শিক্ষার্থী।

এক মাস পরে ৯ সেপ্টেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আল-আমিন লেবু। আল-আমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার জেলার নন্দীগ্রাম থানায়।

কিছুদিন পরে ২৬ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শিক্ষার্থী আঞ্জুমান আরা সুখী। ব্রেন ইনফেকশনজনিত কারণে মৃত্যু হয় তার। সুখী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেউতা গ্রামে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একই মাসের ২৯ তারিখ সবাইকে ছেড়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে মারা যান শেখ ফজলুল হক রোমান। রোমান জবি শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিন পরেই না ফেরার দেশে চলে যান এ ছাত্রনেতা।

ধারাবাহিক মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়ে গত ১১ নভেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় শিক্ষার্থী আল-আমিন শিকদারের। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মেধাবী এ শিক্ষার্থীর স্বপ্নের বাংলাদেশ ব্যাংকের এডির চাকরিতে যোগদান করার কথা ছিল।

সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান শিপন বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিপন বিশ্বাসের গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার চটকাবাড়িয়া। শিপনের অকাল মৃত্যুতে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে সবাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এসব মেধাবী শিক্ষার্থীর গল্পটা আজ শুধু স্মৃতির পাতায় লিখা থাকবে। তাদের চলে যাওয়া শুধু বাবা-মায়ের স্বপ্নকে শুধু বিলীন করেনি, সহপাঠীসহ পুরো ক্যাম্পাসের শিক্ষকদের আকুলতাকে যেন হার মানিয়েছে।

পরিশেষে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকদের একটা চাওয়া পরপারে যেন ভালো থাকেন ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখগুলো। আর কোনো স্বপ্ন যেন এভাবে অকালে ঝরে না পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *