২ লাল কার্ডসহ ১৪ কার্ডের ম্যাচে বার্সাকে রুখে দিল এস্পানিওল

নিস্তরঙ্গ ম্যাচে এস্পানিওলকে পেনাল্টি দিলেন রেফারি আন্তোনিও মাতেও লাহোস। এতে বদলে গেল ম্যাচের আবহ। উত্তপ্ত হয়ে উঠল কাম্প নউ। কার্ডের ছড়াছড়িতে দুই দলই পরিণত হলো ১০ জনে। ঘটনাবহুল ডার্বিতে বার্সেলোনাকে রুখে দিল এস্পানিওল। লা লিগায় শনিবারের (৩১ ডিসেম্বরের) ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। এক পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে ফিরেছে বার্সেলোনা। গোল পার্থক্যে পিছিয়ে দুই নম্বরে নেমে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

দুই লাল কার্ডসহ দুই দলের মিলিয়ে এ ম্যাচে কার্ড দেখেছে ১৪ জন। মজার বিষয় হল এই ম্যাচে পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস ম্যাচে থাকা কার্ড দিয়ে রেকর্ড গড়া সেই রেফারি মাতেও লাহোস। বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায় নিজের তিনশতম ম্যাচটি জর্দি আলবার জন্য হয়ে থাকল হতাশার। দুইটি হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার। একই পরিণতি হয় এস্পানিওল মিডফিল্ডার ভিনিসিউস সোসার। ৭৭ শতাংশ সময় বল দখলে রাখা বার্সেলোনা গোলের জন্য নেয় ২১ শট, যার ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। এস্পানিওলের চার শটের কেবল একটিই ছিল লক্ষ্যে।

আদালতের রায়ে ম্যাচের আগের দিন রবের্ত লেভানদোভস্কির তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি ভালোভাবে নেয়নি এস্পানিওল। বিবৃতিতে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানায় তারা। স্প্যানিশ গণমাধ্যমে খবর আসে, ম্যাচ না খেলার কথাও ভাবছে তারা।
তবে যথা সময়েই শুরু হয় ম্যাচ, ফুটবল কিংবদন্তি পেলে স্মরণে এক মিনিট নীরবতা দিয়ে। ম্যাচের আগের উত্তাপের কোনো চিহ্নই ছিল না ৭২ মিনিট পর্যন্ত। এস্পানিওলের পেনাল্টি ঘিরে পাল্টে যায় সব, দুই দলের বেঞ্চের খেলোয়াড়দেরও হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। বাদ যাননি বার্সেলোনা কোচও।

ঘরের মাঠে ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বার্সেলোনা। গাভির শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন এস্পানিওল গোলরক্ষক আলভারেস ফের্নান্দেস। সেই কর্নার থেকেই পরের মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। কর্নার থেকে আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেনের হেডে বল পান আলোনসো। তিনি ছুটে গিয়ে আরেকটি হেডে খুঁজে নেন জাল।

চেলসি থেকে বার্সেলোনায় আসা স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের এটাই লা লিগায় প্রথম গোল। ১৮তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত। জর্দি আলবার দারুণ ক্রসে ছয় গজ দূর থেকে আলোনসোর ভলি একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। হাতছাড়া হয়ে যায় দারুণ একটা সুযোগ।

পাঁচ মিনিট পর গাভির কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রাফিনিয়া। তবে ব্রায়ান ওলিভারের দুর্দান্ত ট্যাকেলে গোলের চেষ্টা করতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার। রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত থাকা এস্পানিওল তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। তবে রক্ষণের কাজটা মনোযোগ দিয়ে করে আশা বাঁচিয়ে রাখে তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান বাড়াতে পারত বার্সেলোনা। তবে ৫৬তম মিনিটে সের্হি রবের্তোর চমৎকার ক্রসে অরক্ষিত লেভানদোভস্কি একটুর জন্য হেড রাখতে পারেননি লক্ষ্যে। খেলার ধারার বিপরীতে ৭৩তম মিনিটে সফল স্পট কিকে ম্যাচে সমতা ফেরান হোসেলু। তার গায়েই আলোনসোর মৃদু টোকায় পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি।

গোলের পর ২ মিনিটের মধ্যে তিনি দেখান পাঁচটি হলুদ কার্ড। ৭৮তম মিনিটে রেফারির সঙ্গে কথা বলতে গেলে আলবাকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। বার্সেলোনা পরিণত হয় ১০ জনের দলে।

গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডসের কোয়ার্টার-ফাইনালে ‘বাজে ম্যাচ’ পরিচালনার জন্য সমালোচিত হওয়া লাহোস ৮০তম মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখান সোসাকে। ১০ জনের দলে পরিণত হয় এস্পানিওলও। পরে এস্পানিওল অধিনায়ক লিওনার্দো কারবেরাকেও লাল কার্ড দেখান রেফরি! তবে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পরে বদলান সিদ্ধান্ত।

৮৭তম মিনিটে বার্সেলোনার দুটি চেষ্টা দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন এস্পানিওল গোলরক্ষক। ক্রিস্টেনসেনের শট ব্যর্থ করে দেওয়ার পর তিনি হতাশ করেন লেভানদোভস্কিকে। যোগ করার সময়ের দশম মিনিটে জালের দেখা প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল বার্সেলোনা। লেভানদোভস্কির শট একজনের গায়ে লেগে একটু দিক পাল্টে বার ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। কর্নার থেকে কিছু করতে পারেনি বার্সেলোনা। বছর শেষ করে হতাশার ড্র দিয়ে।

১৫ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে রিয়ালেরও পয়েন্ট ৩৮। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে এস্পানিওল আছে ১৬ নম্বরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *