কোচিং বাণিজ্যে এগিয়ে ভারতের সবচেয়ে চাপে থাকা শহর ‘কোটা’

অনলাইন ডেস্ক

শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভারতের রাজস্থানের কোটা শহর। এই শহরটির খ্যাতি গোটা দেশজুড়ে। খোদ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শহরটিকে ভারতের ‘শিক্ষার কাশীধাম’ বলে অভিহিত করেছেন। এ শহরটির কোচিং বাণিজ্য বর্তমানে ১২০ বিলিয়ন রুপিতে দাঁড়িয়েছে।

পাঠ্যক্রমের সঙ্গে তাল মেলাতে এখানকার শিক্ষার্থীদেরকে বেশিরভাগ সময়ই পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করতে হয়। তারা সপ্তাহের সাতদিনই পড়ার মধ্যে থাকেন। কেউ কেউ ভোর চারটায় উঠেই পড়া শুরু করেন, তারপর সারাদিনে আরও ছয় ঘণ্টার ক্লাস। প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর একটি করে পরীক্ষা থাকে তাদের।

এই শহরে প্রতিবছর তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী জড়ো হন। এখানে এসে তাদেরকে দিনে ১৮ ঘণ্টা পড়ালেখা করতে হয়, পরীক্ষায় পাওয়া নাম্বার তাদের হাসি-বিষাদের কারণ হয়। এ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতের পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হন। আর বাকিদের জন্য কোটা হয়ে ওঠে বিধ্বস্ত জীবনের অপর নাম।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কোটা ভারতের ‘কোচিং রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এখানে গড়ে উঠেছে প্রায় ডজনখানেক বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। দেশটির সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মেডিকেল ও প্রকৌশল কলেজগুলোর ভর্তিপরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর শহরটিতে প্রস্তুতি নিতে আসেন।

এ বছর ২০ লাখের বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় (নিট) অংশ নিয়েছেন। তারা মাত্র এক লাখ ৪০ হাজার আসনের জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছেন। অন্যদিকে আইআইটি নামক প্রযুক্তি কলেজগুলোর ১০ হাজার মহার্ঘ আসনের বিপরীতে পরীক্ষা দিয়েছেন ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী।

কোটায় পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের বয়স ১৭ থেকে ২০-এর কোঠায়। পাঠ্যক্রমের সঙ্গে তাল মেলাতে তাদেরকে বেশিরভাগ সময়ই পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করতে হয়। তারা সপ্তাহের সাতদিনই পড়ার মধ্যে থাকেন।

পরীক্ষাগুলোতে সবচেয়ে বেশি নাম্বার পাওয়া ‘টপার’দের সারাদেশে তারকাদের মতো উদযাপন করা হয়, বিলবোর্ডে তাদের ছবি সাঁটানো হয়, তাদের কলেজ থেকে লাখ রুপি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ কলেজগুলোও আবার একে অপরের সঙ্গে শীর্ষস্থান দখলের প্রতিযোগিতায় নামে।

এসবের বাইরে একটি কালো অধ্যায়ও রয়েছে। কোটার অতিরিক্ত চাপের পরীক্ষাগুলো, শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক, পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা — এ নিষ্ঠুর সংস্কৃতির ওপর সম্প্রতি আলোকপাত করা হচ্ছে।

এ বছর এ শহরে কোচিং করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭ জন নিজেদের জীবন ত্যাগ করেছেন। এ সংখ্যা রেকর্ড। ভারতের অনেক মন্ত্রী কোচিংকেন্দ্রগুলো নিষিদ্ধ করারও দাবি তুলেছেন। দেশটির পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এ মাসে রাজস্থানের রাজ্য সরকার উচ্চ আত্মহননের হার কমাতে নতুন কিছু নীতিমালা তৈরি করেছে। কক্ষগুলো থেকে সিলিং ফ্যান সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে কোটা’র কোনো প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষক কথা বলেনি।

তবে কোচিং সেন্টারগুলোর সমালোচনা হলেও শিক্ষার্থীরা এবং মনস্তাত্ত্বিকেরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি চাপ তৈরি হয় বাড়ি থেকে। পরিবারে একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার থাকা ভারতে দীর্ঘকাল ধরেই উচ্চমর্যাদার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর অনেক মা-বাবার কাছে এ মর্যাদা অর্জনের রাস্তা হচ্ছে কোটা।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *