৫০০ বছরের গাব গাছের যত গল্প
বেশি বয়সের বট, তেঁতুল গাছের দেখা মিললেও গাব গাছ তেমনটা দেখা যায় না। তবে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামে দেখা মিলেছে পাঁচ শতাধিক বছর বয়সী দেশি গাব গাছ। গাছটিকে ঘিরে রয়েছে নানা অজানা কথা, রয়েছে জিন-ভূতের নানা গল্প।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম উপজেলার কৃষ্ণপুর। সেখান থেকে পশ্চিম দিকে সরু রাস্তা প্রবেশ করেছে। দেড় কিলোমিটার পার হলে সড়কের উত্তর পাশে গাব গাছটির অবস্থান। এই স্থানটির নাম মনপাল মোল্লা বাড়ির মাইধ্যের (মধ্যম) পুকুর পাড়। পুকুরের পূর্ব দক্ষিণ কোনে গাছটির অবস্থান।
স্থানীয়দের দাবি, গাছের বয়স ৫০০ বছরের বেশি হবে। এই এলাকা এক সময় ঝোপঝাড় ছিলো। মানুষ ভয়ে সন্ধ্যায় কম চলাচল করতো। তবে দিনে দামাল ছেলেরা গাছে উঠে পড়তো। গাছের কাঁচা গাব দিয়ে জেলেরা জালে মাড় দিতো। পাকা গাব নিয়ে থাকতো কিশোরদের প্রতিযোগিতা। কে কার আগে পেড়ে নিবে। কৃষক পাশের মাঠ কাজ করতে এসে এই গাছের নিচে বসে গামছায় গায়ের ঘাম মুছতেন। কেউ লুডু খেলেন। পথচারীরা এর তলে বিশ্রাম নেন। এই বয়স্ক গাছটি দেখতে দূর থেকে মানুষ আসেন। প্রতি বছর নিয়ম করে ফল দিয়ে যাচ্ছে গাছটি। নিচে পড়ে থাকা পাতা অনেকে রান্নার কাজে ব্যবহার করেন। সম্প্রতি গাছের বড় ঢালগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। ডানা মেলে বিশালত্ব জাহির করা গাছ এখন অনেক ছোট হয়ে এসেছে। পাশে দোকান গড়ে উঠেছে। বেড়েছে মানুষের আনাগোনা।
পাশের বাড়ির প্রবীণ নারীরা জানান, তারা দেখেছেন গায়ে সাদা পোশাক পরিহিত গাছ থেকে বড় পা ফেলে কেউ নিচে নামছেন। তাদের উচ্চতা হবে ১৫/২০ ফুটের মতো হবে। এমন ভূতের ভয় দেখিয়ে তারা শিশুদের ঘুম পাড়াতেন।
মনপাল গ্রামের ১২৭ বছর বয়সের মোখলেছুর রহমানের সাথে দেখা হয় পাশের লিয়াকত আলীর চা দোকানে। তিনি গাছের নিচে গিয়ে এই প্রতিবেদককে জানান নানা গল্প। প্রতিবেদকের ক্যামেরায় একসাথে বন্দি হয় গ্রামের বয়স্ক গাছ ও প্রবীণ এই মানুষ।
তিনি বলেন, পাশে ধানী জমি ছিল। এখন সেখানটা ভরাট হয়ে গেছে। তিনি ৫০ বছর আগে এখানে জমিতে কাজ করতে এসে মানুষের পায়ের মোটা হাড় পান। সেটিও লম্বায় তিন হাতের মতো। মানুষটাও নিশ্চয় অনেক লম্বা ও মোটা ছিল।
তার দাবি, এই গাব গাছের বয়স ৫০০ বছরের বেশি হবে। তিনি তার হিজা (দাদার বাবা) থেকে শুনেছেন কবে এই গাছের জন্ম তা কেউ জানে না। গাছের ডাল ছিল চারপাশে ছড়ানো। তার শেকড়ও চারদিকে ছড়িয়ে ছিলো। মানুষ দিনে শিকড়ে বসে আড্ডা দিতেন। রাতে ভয়ে এই পথে যেতে চাইতেন না। গেলেও দল বেঁধে যেতো। রাতে সাদা কাপড় পরে এখানে জিন দুই পা ফাঁক করে রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতো।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের বিকল্প নেই। একটি বয়স্ক গাছ ওই এলাকার ইতিহাসকে বয়ে বেড়ায়। এই গাছটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। দেশে শুধু সেগুন গাছের বয়স জানার সুযোগ রয়েছে। অন্য গাছগুলোর বয়স স্থানীয় প্রবীণদের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।