১০ গ্রামের মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নে নদীর ওপর কোনো সেতু না থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছেন এলাকাবাসী। বিগত দুই যুগ ধরে কষ্টে যাতায়াত করছেন কয়েক হাজার মানুষ। বিকল্প হিসেবে চলাচলে এখন তাদের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়ামারী ও রৌমারী উপজেলার লাঠিয়াল ডাঙা সড়কের জিনজিরাম নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোই এখন তাদের একমাত্র ভরসা। এসব মানুষ চলাচলের বাইরে তাদের উৎপাদিত পণ্য আনা নেয়াও করতে হয় এ রাস্তা দিয়ে। এতে কৃষকদের বিভিন্ন কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায় গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারের কারো নজর নেই। তাই এসব মানুষের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়ামারী ও রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের লাঠিয়াল ডাঙা সড়কের বালিয়ামারী নামক এলাকায় জিনজিরাম নদীর ওপর একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ সাঁকোটির অবস্থা অত্যন্ত নড়বড়ে। প্রতিদিন প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ শিশু শিক্ষার্থীরা। উৎপাদিত কৃষিপণ্য মাথায় নিয়ে পারাপার হচ্ছেন অনেকেই।
বালিয়ামারী নয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা চান মিয়া জানান, আমি নদীর ঘাট ডেকে নিয়েছি। বর্ষা মৌসুমে খেওয়া নৌকা চালিয়ে মানুষকে পারাপার করি। আর শুষ্ক মৌসুমে এ বাঁশের ব্রিজটি স্বেচ্ছায় নির্মাণ করে দিয়েছি। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে মানুষ খুব কষ্টে এ পথে যাতায়াত করছেন। মানুষের দুঃখের যেন শেষ নেই। এ বাঁশের সাঁকোটির সাথে পাশের বেশ কিছু গ্রামের সংযোগ।

বকবান্ধা, খেওয়ার চর, আলগার চর, লাঠিয়াল ডাঙ্গা, বংশী ভিটা, বাগান বাড়ি, বালিয়ামারী বাজার পাড়া, ব্যাপারী পাড়া, পশ্চিম পাড়া, মন্ডল পাড়া, নয়াপাড়া, শিবেরডাঙ্গী ও চর লাঠিয়াল ডাঙা গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে থাকেন।

বালিয়ামারী গ্রামের বাসিন্দা ডেকোরেটর ব্যবসায়ী বশির আলম বলেন, বাঁশের এই ব্রিজ দিয়ে এ অঞ্চলের বৃদ্ধ ও বয়স্ক মানুষ, স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন চলাচল করে। তাছাড়া এ এলাকার বেশ কিছু রোগী এই সেতুর ওপর দিয়ে নিতে যথেষ্ট দুর্ভোগে পড়তে হয়। নিরুপায় ও বাধ্য হয়ে এখানকার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তা ব্যবহারসহ সেতু পার হয়ে আসছে। মাঝে মধ্যে এ সেতুর কিছু জায়গায় সাঁকোর খুঁটি ও মাঁচা ভেঙে ঘটে দুর্ঘটনা। সেতু নির্মাণ না হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত টাকা খরচ এবং ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওই এলাকার কৃষকরা।

বালিয়ামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আকুল জানান, ওই জায়গায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণ করা গেলে হাজার হাজার মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

মোটরসাইকেল চালক মমিনুল ইসলাম মিন্টু আক্ষেপ করে বলেন, এই সাঁকোতে উঠলেই মোটরসাইকেল চালাতে ইচ্ছে করে না। মারাত্মক আতঙ্ক নিয়ে পারাপার হতে হয়।

এ ব্যাপারে রাজিবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিরন মো. ইলিয়াস জানান, এলাকার মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে ব্রিজটি সংস্কার করা দ্রুত প্রয়োজন।

সেতু সংস্কার প্রসঙ্গে রাজিবপুর উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ব্রিজের তালিকা দিয়েছি। যেকোনো মুহূর্তে তা অনুমোদন পেলে নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *