চলনবিলের মাঠজুড়ে হলুদের সমাহার
শীতের শুরুতেই সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠজুড়ে যেন হলুদের কার্পেট বিছানো হয়েছে। সরিষা চাষ করে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি হলুদ ফুল মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়েছে। হলুদ ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর সরিষার ফুলের উপর শীতের শিশির কণা মানুষের মনের খোরাক নিবারণ করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে এখন শুধইু হলুদ রঙ। কোথাও ফুলে রঙ আসা শুরু করেছে-কোথাও গাঢ় রঙ ধারন করেছে। ইরি আর বোরো ধান কাটার পরই সিরাজগঞ্জের কৃষকরা সরিষার চাষ শুরু করেন। চলতি বছর কৃষকরা, বারি-১৪, বারি-১৭ ও বিনা-৯ আধুনিক জাতের সরিষা চাষ হয় এ অঞ্চলে। দিগন্ত জোড়া সরিষা শুধু তেলের চাহিনা নয় গো-খাদ্যের খৈলের চাহিদাও পুরন করেন। এছাড়াও সরিষা ন্যাড়া জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করেও লাভবান হবার পাশাপাশি মধু চাষীরা মধু সংগ্রহ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়। সব মিলিয়ে ফলন ভাল হলে লাভবান হওয়ার আশা করছে কৃষকেরা।
কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করতে ১০-১২ হাজার খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে ৬মন সরিষা পাওয়া যায়। ৪ হাজা টাকা মন দরে বিক্রি করলে ১০-১২ হাজার টাকা লাভ হয়।
কৃষক আফজাল মাস্টার জানান, সরিষা আবাদ করতে যেমন স্বল্প খরচ হয় তেমনি স্বল্প পরিশ্রম হয়। মাত্র দুটি চাষ দিয়ে সরিষা বোনা হয়। এরপর ফুল আসার আগে একবার, ফুল আসলে একবার আর পাকার আগে একবার ভিটামিন দেয়া হয়। তারপর পুরোপুরি পাকলে ঘরে তোলা হয়।
কৃষক হাসান আলী জানান, সরিষা আবাদ লাভজনক। সরিষার ফুল থেকে হাজার হাজার মন মধু উৎপাদন করা হয়। সরিষার খৈল গো-খাদ্যের চাহিদা পুরন। সরিষার ন্যাড়া জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করা যায়। সরিষার আবাদ সবদিক থেকে লাভজনক।
স্থানীয় যুবক মেহেদ হাসান মুন্না জানান, সরিষা যেমন মানুষের তৈলের চাহিদা পুরন করে তেমনি মানুষের মনের খোরাকও পুরন করেন। দিগন্ত জোড়া সরিষা ফুলের সমারোহ মানুষের মনের ও হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটায়। এ কারনে দুর-দুরান্ত থেকে শতশত সৌন্দর্য্য পিপাসু মানুষ শীতের সকাল ও বিকেলে চলনবিলাঞ্চলের সরিষা ক্ষেতের আইলগুলোতে ভিড় জমায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সুত্র ধর জানান, সরিষা আবাদ লাভজনক হওয়ায় কৃষরা সরিষা আবাদের দিকে ঝুকছে। এবছর সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬৩ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে-যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৯ হেক্টর জমিতে বেশি জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলনে বেশি হবে বলে জানালেন এই কৃষি কর্মকর্তা।