ভিক্ষা নয়, দোকান করে সংসার চালান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাজেম
কারো দয়া-ভিক্ষা নয়, দোকান করে সংসার চালান মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মুনাইল গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. মাজেম মোল্লা (৫০)।
তিনি বলেন, আমি কারো দয়ায় চলতে চাই না। আমি চোখে দেখিনা, আমি লেখাপড়া জানি না। অনেক কষ্টে ব্যবসা শিখেছি। ব্যবসা করে সংসার চালাই।
মাজেম মোল্লা জানান, পাঁচ বছর বয়সে তিনি অসুস্থ হন। চিকিৎসার অভাবে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তারপর খেয়ে না খেয়ে অবহেলা আর অযত্নে সংসারে বড় হতে থাকেন মাজেম। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে মাজেম তৃতীয়। অন্ধ হওয়ার কারণে কেও তার পছন্দের কোনো মূল্য দিতো না। সব ভাইয়েরা লুঙ্গি পরলেও তাকে পরানো হতো হাফপ্যান্ট। এতে তিনি মনে মনে খুব কষ্ট পেতেন। তিনি ভাবতে থাকেন কিভাবে বেঁচে থাকবেন, কি করবেন। তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন কখনো ভিক্ষা করবেন না। একদিন তার মা বলেন, তুই বাড়ির সামনে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা কর। আমি তোকে জিনিসপত্র কিনে দিবো। সেই থেকে পথ চলা। আজ সে এলাকার আদর্শবান একজন ব্যবসায়ী।
মাজেম আরোও জানান, প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ ব্যবসা করছেন। কোনো কিছুতেই সমাস্যা নেই। হাত দিলেই টাকার মান বুঝতে পারেন। পরিমাপেও কোনো অসুবিধা হয় না। খরিদ্দাররাও সহযোগীতা করেন। মাজেম বলেন, আমি কারো কাছে কিছু চাই না, কারো কাছ হাত পাতি না। তবে সরকার যদি সহযোগীতা করতো তাহলেই আমি একটু ভালোভাবে চলতে পারতাম।
মাজেমের স্ত্রী বলেন, তার মতো সৎ ও বড় মনের মানুষ হয় না। তিনি কারো কাছে হাত পাতেন না। এতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি তিন ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে ভালোই আছি। দুই ছেলে অল্প লেখাপড়া করে কাজে যোগ দিয়েছে, ছোট ছেলে দশম শ্রেণীতে পড়ে। তবে লেখাপড়া চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমার পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে মাজেম মোল্লা কোনো ধরনের সাহায্যের জন্য আসেননি। কারো কাছে তাকে নত হতে দেখিনি। তিনি ছোট একটি দোকান করে সুন্দরভাবে সংসার করছেন। তিনি এলাকার মডেল। তাকে দেখে অনেকে হয়তো ভিক্ষা না করে কর্মকরে খাওয়ার চেষ্টা করবে।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরউদ্দিন মানিক বলেন, মাজেম অন্ধ হয়েও ব্যবসা করে খাচ্ছেন। ভাবতেও ভালো লাগে, তিনি কখনো আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসেননি।