যমুনার জলে মুজিব শতবর্ষের ঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়া সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নির্মিত পাকাবাড়ি। গত কয়েকদিনে যমুনার ভাঙনে ভেঙে নেয়া হয়েছে ২৪ টি পাকাবাড়ি, ২টি যমুনায় বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে ৪৩ টি পাকাবাড়িসহ একটি গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর। নির্মাণের সময় সঠিক স্থানে নির্মাণ না করায় সরকারের কোটি টাকা জলে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী এবং জনপ্রতিনিধি।

গত কয়েকদিন আগে উপজেলার সদর ইউনিয়নের আলতাফ আলীর ঘাটে ইট এবং রডবোঝাই একটি নৌকা খালাস করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞেস করে জানা যায় গত ২ বছর আগে কোটি টাকায় নির্মাণ করা মুজিব শতবর্ষের ঘরগুলো যমুনা নদীতে বিলীন হচ্ছে। তাই তড়িঘড়ি করে উপকারভোগীরা ঘরের ইট, রড এবং টিনের চালা কোনমতে খুলে নিয়ে যাচ্ছেন যে যার মতো। সংবাদ শুনে সরেজমিন পরিদর্শনে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়।

সেখানে দেখা যায় বিশালাকার নদীর কিনারায় পাকা বাড়িঘর দাঁড়িয়ে আছে। কোনও ঘরের অর্ধেক আছে, আবার অর্ধেক পানিতে বিলীন হয়েছে। এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় কেউ কেউ বাড়ি ভেঙে সংগ্রহ করছেন ইট এবং রড। কেউবা ঘরের টিন সংগ্রহ করতে ব্যস্ত রয়েছেন। এ চিত্র উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের বিরামের পাঁচগাছি গ্রামে।
এ গ্রামের মৃত হোসেন সরকারের স্ত্রী মিনি বেগম (৭০) একমনে ইট সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৯ বার যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তিনি এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন প্রায় ৮ বছর আগে। গত ২ বছর আগে তিনি একটি পাকা বাড়িও পেয়েছিলেন। পাকা বাড়ি পেয়ে তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। এ জীবনে তার পাকা বাড়িতে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই এ গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়। নদী ভাঙনে বেশকিছু পাকাবাড়ি যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে মিনি বেগম তার স্বপ্নের পাকাবাড়ি বিশালাকার হাতুড়ি দিয়ে ভাঙতে শুরু করেছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ পর্যায়ে উপজেলার বিরামের পাঁচগাছি গ্রামে মুজিব শতবর্ষের ৬৯ টি পাকাবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল প্রায় ২ কোটি টাকার মতো। যমুনা নদীর ভাঙনে ৬৯ টি পাকাবাড়ির মধ্যে ২৬ টি পাকাবাড়ি যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ৪৩ টি পাকাবাড়ি এবং প্রায় শতাধিক হেল্প মি সংস্থার টিনসেড বাড়িঘর যমুনা নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ঘরগুলোকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বেশকিছু জিও এবং টিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। কিন্তু যমুনা নদীর প্রবল স্রোতে জিও এবং টিও ব্যাগ কোনও কাজে আসেনি।

স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বাদশা বলেন, ঘরগুলো নির্মাণের সময় স্থান নির্বাচন একেবারেই ভুল ছিল। নদীর দেড় কিলোমিটারের মধ্যে একেবারেই বালু মাটিতে ঘরগুলো করা উচিৎ হয়নি। এখন সরকারের কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। ঘরগুলো নির্মাণের সময় আমি জনপ্রতিনিধি ছিলাম না, এমনকি ঘরগুলোর কবুলিওতের সময়ও আমার নিকট থেকে কোনও প্রকার প্রত্যয়ন গ্রহণ করা হয়নি। তবে ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর একটা ঠিকানা হোক সেটা আমি চাই।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, বিরামের পাঁচগাছি গ্রামের মুজিব শতবর্ষের ঘরগুলো রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও টিও ব্যাগ ফেলে অনেকভাবে চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু যমুনা নদীর প্রবল স্রোতে তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। নদী ভাঙনের শিকার মুজিব শতবর্ষের ক্ষতিগ্রস্থ উপকারভোগীদের তালিকা করা হয়েছে। তালিকাগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে চর ডিজাইনের ঘর প্রদান করে তাদের পুনরায় পুনর্বাসন করতে আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights