কীভাবে ইসরায়েলের এত গভীরে হামলা চালালো হিজবুল্লাহ?

অনলাইন ডেস্ক

রবিবার ইসরায়েলের মধ্য-উত্তরাঞ্চলীয় হাইফার দক্ষিণে বেনইয়ামিনা এলাকায় সামরিক বাহিনীর গোলানি ব্রিগেড ক্যাম্পে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এতে ৭১ ইসরায়েলি সেনা হতাহত হয়েছে। এর মধ্যে চারজন নিহত ও ৬৭ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে অন্তত সাতজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকেও হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে তারা আহতের কথা জানিয়েছে, ৬০ জনের বেশি।

স্থানীয় সময় রবিবার দিনের শেষ ভাগে এই ড্রোন হামলা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি ভুখণ্ডে এটিই সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। কিন্তু কীভাবে ইসরায়েলের এত গভীরে এই ড্রোন হামলা চালালো হিজবুল্লাহ?
ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা খুবই ‘নির্ভরযোগ্য’ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ইসরায়েলের গভীরে ঢুকে প্রাণঘাতী হামলা চালাতে সক্ষম হয় হিজবুল্লাহর ড্রোন।

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলেছে, হিজবুল্লাহর পাঠানো একটি ড্রোন বেনইয়ামিনা শহর-সংলগ্ন ইসরায়েলি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায়। শহরটির অবস্থান তেল আবিবের উত্তরে। লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে।

রবিবার হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বেনইয়ামিনায় ইসরায়েলি বাহিনীর একটি পদাতিক প্রশিক্ষণ শিবির নিশানা করে হামলা চালাতে একঝাঁক ড্রোন পাঠিয়েছে।

হিজবুল্লাহর এমন কথার পরই ইসরায়েলে ড্রোন হামলার খবর প্রকাশ্যে আসে।

হিজবুল্লাহ বলে, গত বৃহস্পতিবার লেবাননে হামলা চালায় ইসরায়েল। বদলা হিসেবে তারা রবিবার ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, লেবাননে ইসরায়েলি বৃহস্পতিবারের ইসরায়েলি হামলায় ২২ জন নিহত হয়। আহত হয় ১১৭ জন।

এদিকে, বদলা হিসেবে হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েলের গোলানি ব্রিগেডকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে।

গোলানি ব্রিগেড আইডিএফের একটি পদাতিক ইউনিট। যাদেরকে দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করেছে ইসরায়েল।

হামলার দায় স্বীকার করার কিছু আগে হিজবুল্লাহ তাদের সদ্য প্রয়াত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে। এ বার্তায় তিনি হিজবুল্লাহর সদস্যদের নিজেদের লোকজন, পরিবার, জাতি, মূল্যবোধ ও মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানান। গত মাসের শেষ দিকে ইসরায়েলি হামলায় নাসরুল্লাহ নিহত হন।

রবিবার দিনের শুরুর দিকে আইডিএফ বলেছিল, লেবানন থেকে পাঠানো একটি ড্রোন তারা রুখে দিয়েছে। তবে এ ঘটনা কোথায় ঘটেছে, তা তারা নির্দিষ্ট করে বলেনি।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা খুবই নির্ভরযোগ্য। কিন্তু রবিবার এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয় হিজবুল্লাহর ড্রোন। হিজবুল্লাহর সেই ড্রোন ইসরায়েলের গভীরে ঢুকে প্রাণঘাতী হামলা চালায়।

সিএনএন আরও বলেছে, রবিবার হামলার সময় বেনইয়ামিনা এলাকায় কোনও সতর্কবার্তার খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ড্রোন কীভাবে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের এতটা গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যতিব্যস্ত রাখার জন্য উত্তর ইসরায়েলি শহর নাহরিয়া ও একর নিশানা করে বেশ কয়েক ডজন রকেট ছোড়ে। একই সঙ্গে তারা একঝাঁক ড্রোন পাঠায়।

সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, এই ড্রোনগুলো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা রাডারগুলোকে ফাঁকি দিতে পেরেছে। এরপর সেগুলো বেনইয়ামিনার অভিজাত গোলানি ব্রিগেডের প্রশিক্ষণ শিবিরের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায়।

আইডিএফের শীর্ষ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ ঘটনা তদন্ত করবে। কীভাবে ঘাঁটিতে ড্রোন প্রবেশ করল, কিন্তু সতর্কসংকেত বাজল না, তা খতিয়ে দেখা হবে।

ঘাঁটিটি থেকে দেওয়া এক ভিডিও বিবৃতিতে হাগারি বলেন, তারা এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবেন। তারা ঘটনাটি তদন্ত করবেন।

আইডিএফের এই মুখপাত্র বলেন, তারা যুদ্ধের শুরু থেকেই ড্রোন হুমকি মোকাবিলা করে আসছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আরও উন্নতি দরকার। সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights