ফেনী নদীতে মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা

ফেনী প্রতিনিধি

ফেনী নদীতে জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। ঘাট থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০টি নৌকা নিয়ে তারা ফেনী নদী হয়ে মোহনায় জাল ফেলেও পাচ্ছেন না কাঙ্খিত ইলিশ। জেলেরা জানান, নৌকাপ্রতি তারা গড়ে ১০ থেকে ১৫টি ইলিশ পাচ্ছেন। সেখানে জেলের খরচ তুলতে প্রতি কেজি মাছের দাম পড়ছে ৭০০ থেকে হাজার টাকা। পরবর্তীতে সে মাছের দামও হয়ে যায় দ্বিগুণ। তারা জানান, ঋণ করে তারা নদীতে মাছ ধরতে নামছেন। মাছ না পাওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জানা যায়, জেলেদের জালে ধরাপড়া বেশিরভাগ ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজির বেশি। জেলেদের অভিযোগ নদীতে বাহিরাগত জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরলে মাছের প্রজনন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কিনারে মাছ আসতে পারছে না। গতবছর ভালো ইলিশ ধরলেও এবার বহিরাগত জেলেদের উৎপাতে তার চারভাগের একভাগও ধরতে পারবে না।

জেলে মো. আবছার জানান, ২০ বছর ধরে এ নদীতে মাছ ধরছেন তিনি। তার নৌকাটি বড়। ১০/১২জন জেলে নিয়ে নদীতে যান মাছ ধরতে। তিনি প্রতিবার বিনিয়োগ করেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তিনি যে পরিমাণ মাছ পেয়েছেন তা তিনি বিক্রি করেছেন ১৩ হাজার টাকা। এ চালানে তিনি ১৭ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, বরিশাল অঞ্চলের জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। প্রায় ৩০০ নৌকা সেখানে মাছ ধরছে। সে জালে সবধরনের মাছের ক্ষতি হচ্ছে। মাছের রেনুও মারা যাচ্ছে। তাদের উৎপাতে উজানের দিকে মাছ আসছে না। এ কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করা গেলে বড় ফেনী নদীতে মাছ পাওয়া যেত বেশি।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী জেলে প্রিয় লাল জলদাস জানান, ফেনী নদী থেকে শুরু করে স্বন্দ্বীপের চ্যানেলে সাগর মোহনা এলাকায় জেলেরা মাছ ধরেন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। তিনি বলছেন, অনেক আগে ছোট ও বড় ফেনী নদীতে ইলিশ পাওয়া যেতো নিয়মিত। মাঝে পরিমাণে কমে গিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার আরও কম। জেলেরা যে টাকা লোন করে বিনিয়োগ করে নদীতে মাছ ধরতে যান সেটি এখন আর উঠে আসছে না। ফলে তাদের ঋণের পারিমান বেড়ে যাচ্ছে।

ইলিশ কিনতে আসা স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, তিনি শুনেছেন বড় ফেনী নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সে খুশিতে মাছ কিনতে এসছেন ঘাটে। কিন্তু এখানে এসে মাছ তেমন দেখতে না পেয়ে হতাশ হন তিনি। যাও মাছ আসছে সে মাছের দাম চড়া। নাগালের বাইরে। কিনতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

জেলা মৎস বিভাগের তথ্যমতে, সোনাগাজীতে ইলিশ ধরা জেলের সংখ্যা ৪৬০ জন। গত বছরে এ নদীতে ইলিশ ধরা পড়েছে ২৭২ টন। জেলেদের উন্নয়নের জন্য সাসটেইনেবল মেরিন এন্ড কোস্টাল ফিসারিজ প্রজেক্টের আওতায় নেয়া নানা পদক্ষেপের মধ্যে ফিসলেন্ডিং সেন্টার স্থাপনে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৫ শতাংশ খাস জায়গা না পাওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না মৎস্য বিভাগ। এখানে ১০টি সমিতি গঠন করা হয়েছে প্রতিটিতে ১০০ জন সদস্য আছে। যেখানে প্রতিটি সিমিতির জন্য ১০ লাখ টাকা করে মোট এককোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে বরাদ্দ এসডিএফ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলেদেরকে বিনা সুদে ঋণ দিয়ে তাদের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। বিক্রয় না করার শর্তে ২৫০ জন জেলেকে গবাদি বাছুর দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলেদের পরিবারের সদস্যদেরর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ৩টি বিষয় সেলাই,পাইপ ফিটিংস ও ইলেকট্রিক এ ৭০ জন করে ৩ ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে থাকা খাওয়াসহ ১২ হাজার টাকা চাকরির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা(এসিল্যান্ড) এসএম অনীক চৌধুরী জানান, জেলে পাড়া সংলগ্ন স্থানে উপযুক্ত খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। এখনও না পাওয়ায় ফিসলেন্ডিং সেন্টার স্থাপনে নরাদ্দ দেয়া যায়নি।

জেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান, ফেনী নদী ইলিশের একটি রুট ঠিক আছে তবে এটি স›দ্বীপ চ্যানেল হয়ে সমুদ্রের দিকে চলে গেছে। নদী ও সাগরে জেলেদের জালে ইলিশসহ অন্য প্রজাতির মাছও ধরা পড়ছে ঠিকই তবে ইলিশের সংখ্যা কম। কারেন্ট জাল ও বহিরাগত জেলেদের বিরুদ্ধে নদীতে অভিযান চালাতে কেনা হয়েছে স্প্রীডবোর্ড। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাদের ধরতে শীগগিরই চালানো হবে অভিযান। এছাড়াও ফিসলেন্ডিং সেন্টার স্থাপন করা গেলে দাদনকারী অথবা মহাজনের কাছ থেকে জেলেরা তাদের মুক্ত করতে পারলে ইলিশের দাম আরও কমবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন সিন্ডিকেট আর দাদনকারীদের হাত থেকে জেলেরা রেহায় পেলে ইলিশের কেজি প্রতি দাম থাকবে হাজার টাকার নীচে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights