অটিজম নিয়ে কিছু কথা

ডা. রাসেল আক্তার

এটির পুরো নাম অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) অটিজম একটি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল, নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার, যা তিন বছর বয়স হবার পূর্বেই প্রকাশ পায়। অটিজম শিশুরা সামাজিক যোগাযোগে দুর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সক্ষমতা কম হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বারংবার করার প্রবণতা থেকে এদের শনাক্ত করা যায়। এই রোগের কারণ সর্ম্পকে এখনও কোন পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে জেনেটিক কারণে এটি হয় বলে প্রমাণ আছে। অটিজম জিনগত এবং পরিবেশগত কারণের সংমিশ্রণের সাথে জড়িত।

এক থেকে দুই বছর বয়সে শিশুর আচরণে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। অভিভাবকরাই সাধারণত প্রথমে এ রোগের লক্ষণ বুঝতে শুরু করেন। লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি। রোগ নির্ণয়ে মূলত শিশুর সম্পূর্ণ আচরণের ইতিহাস এবং স্নায়ু-তাত্ত্বিক গণনার হিসাব বিবেচনা করা হয়। আক্রান্ত শিশুর পরিচর্যা করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ রোগের ক্ষেত্রে একে জীবনযাপনের একটি বিশেষত্ব মনে করে চিকিৎসা করাই ভাল।

অটিজম বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন হারে প্রকাশ পায়। আধুনিক গবেষণা মতে, প্রতি হাজারে ১ থেকে ৩ জন অটিজম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে ১৯৮০ সালের পর থেকে আক্রান্ত হয়েছে জানা গেছে এমন রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
অটিজমের লক্ষণ-

 কিছু কথা বারবার বলা।
 কোনও কিছু ছোটখাটো জিনিসের জন্য প্রচণ্ড চিৎকার করে কাঁদা।
 প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলা।
 ব্যথা/শারীরিক আঘাতের বোধ কম হওয়া।
 বেশি আলো সহ্য করতে না পারা।
 লোকজনের তীব্র হুল্লোড়ে অস্বস্তি।
 কোনও জিনিস নিচু থেকে তোলার সময়ে অসুবিধা।
 মুখের পেশীর উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা।
 মুখভঙ্গিমা নিয়ন্ত্রণে অপারগতা।
 প্রচণ্ড মেজাজ দেখানো ইত্যাদি।

অটিজম শিশুরা সারাক্ষণ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সর্বদা কল্পনার এক অবাস্তব জগতে ডুবে থাকে তারা। নানা রকমের কাল্পনিক শব্দ শোনে, কাল্পনিক দৃশ্য দেখে। কিছু বিষয়কে তারা খুবই পছন্দ করে এবং দিনরাত সেগুলো নিয়েই পড়ে থাকে। আবার কিছু বিষয়কে তারা ভয় পায়, সহ্য করতে পারে না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের বিচার-বুদ্ধির কোন উন্নতি হয় না।

চিকিৎসাঃ

বাচ্চাকে নিয়মিত মেডিসিন খাওতে হবে। বাবা-মা, পরিবারের লোকজন মিলে বাচ্চাকে কাউন্সিলিং করে যেতে হবে। অটিজম সমস্যায় হতাশ বা অধৈর্য না হয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ মত চিকিৎসা করতে হবে।

লেখক: সিনিয়র কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও অটিজম গবেষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights