আল্লাহ গুনাহগুলো মার্জনা করেন

মো. আমিনুল ইসলাম

প্রতিনিয়ত আমরা গুনাহ করছি। জেনে-শুনে যেমন করছি তেমনি মনের অজান্তে ও অজ্ঞাতসারেও গুনাহ করছি। যা আল্লাহ দেখছেন। আল্লাহ আমাদের সব বিষয়ে জ্ঞাত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে অমনিই আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহর কাছে তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে তাদের গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (সুরা ইমরান, আয়াত ১৩৫)। রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো এক ব্যক্তি গুনাহ করার পর যখন বলে, হে আল্লাহ আমি গুনাহ করেছি সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবে ও তাকে পাকড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আরেকটি গুনাহ করে আবারও বলল, হে রব আমি আবারও আরেকটি গুনাহ করেছি সুতরাং আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবে ও তাকে পাকড়াও করবে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। তারপরও সে আরেকটি গুনাহ করে বলল, হে রব আমি গুনাহ করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবে ও পাকড়াও করবে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম, সে যাই করুক না কেন। (বুখারি ৭৫০৭, মুসলিম ২৭৫৮) সুবহানাল্লাহ। রসুল (সা.) আরও বলেছেন, কোনো লোক যদি গুনাহ করে তারপর পাক পবিত্র হয় এবং সালাত আদায় করে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (তিরমিজি ৪০৬, ইবনে মাজাহ, ১৩৯৫)। কোরআনে আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি গুনাহের কাজ করে অথবা গুনাহ করে নিজের ওপর জুলুম করে সে আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে তখন আল্লাহতায়ালাকে পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসেবে পাবে। (সুরা নিসা, আয়াত ১১০)।

তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা কবিরা গুনাহ তা থেকে বিরত থাকলে আমি তোমাদের ছোট ছোট গুনাহগুলো মাফ করে দেব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সুরা নিসা, আয়াত ৩১)। এ আয়াতটি থেকে জানা গেল গুনাহ দুই রকম। কবিরা গুনাহ বা কঠিন গুনাহ। আর কিছু সগিরা গুনাহ হলো হালকা ও ছোট পাপ। যাবতীয় ফরজ কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করা হলো কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার পূর্বশর্ত। ফরজ ওয়াজিব ত্যাগ করা কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সুষ্ঠুভাবে পালন করে তখন তিনি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন এবং আল্লাহও তার সগিরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। রসুল (সা.) বলেছেন, যে কেউ আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, সালাত কায়েম করবে, জাকাত প্রদান করবে এবং কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। সাহাবিগণ কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, কোনো মুসলিমকে হত্যা না করা এবং যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে না যাওয়া। (মুসনাদে আহমদ, ৫/৪১৩)। আল্লাহ বলেন, আর আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তওবা করে, ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তারপর সৎ পথে অবিচল থাকে। (সুরা ত্বা হা, আয়াত ৮২)।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights