একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাবাস পূর্ণ করে মুক্তি পেয়েছেন যিনি
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি কারাবাস পূর্ণ করে মুক্তি পেয়েছেন। তার নাম শামসুল হক। তিনি জামালপুরের বাসিন্দা।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রথমে তাকে আমৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হলে বিচারক তার দণ্ড কমিয়ে ১০ বছর করেন।
আদালতের রায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করে শামসুল হক মুক্তি পেয়েছেন। গত ২১ নভেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন তিনি। আসামিপক্ষের এক আইনজীবীর মতে, তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাবাস পরিপূর্ণ করে মুক্তি পেয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৫ সালের ২ মার্চ আট ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানা জারির পর ওই দিনই বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে অভিযান চালিয়ে জামালপুর শহরের নয়াপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে শামসুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাবন্দী ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই রায় ঘোষণার সময় শামসুল হক ও এস এম ইউসুফ আলী উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা ছিলেন পলাতক।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন- জামালপুরে আশরাফ হোসাইন, আবদুল মান্নান ও আবদুল বারী। আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া আসামিরা হলেন- শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, হারুন, আবুল হাশেম, মো. শামসুল হক ওরফে বদর ভাই ও এস এম ইউসুফ আলী।
ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর আপিল বিভাগে আপিল করেন শামসুল ও ইউসুফ নামে অপর এক আসামি। আপিল বিচারাধীন অবস্থায় ইউসুফের মৃত্যু হয়।
আপিল বিভাগের রায়
২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামালপুরের শামসুল হক ওরফে বদর ভাইয়ের করা আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে সাজা কমিয়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। শামসুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ রায়হান উদ্দিন।
আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের পর এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনাল থেকে সেই রায় কারাগারে পাঠানোর পর তিনি কারামুক্ত হন।