থামছে না গরুবোঝাই ট্রাকে চাঁদাবাজি

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম
পুলিশের হাঁকডাকের মধ্যেও বন্ধ নেই গরুবোঝাই ট্রাকে চাঁদাবাজি। বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে চাঁদাবাজি। এসব পয়েন্টে কখনো পুলিশের নাম আবার কখনো পুলিশের সোর্সের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন চাঁদাবাজিতে অসহায় গরুবোঝাই গাড়ির চালক ও গরু ব্যাপারীরা। গরুবোঝাই প্রতিটি ট্রাক কক্সবাজার থেকে ঢাকা যেতে পথিমধ্যে চাঁদা দিতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে গরু আনতে গুনতে হচ্ছে ১০-১৫ হাজার টাকা। বিশেষ করে মিয়ানমার ও ভারতীয় গরুর ট্রাককে বেশি টার্গেট করে সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশীয় গরুর ট্রাকে কিছুটা শিথিলতা থাকে বলে জানিয়েছেন চালকরা। অভিযোগ, নির্ধারিত চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, হুমকি দেওয়া হয় মামলার।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, আমাদের হাইওয়ে পুলিশের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। গরুবোঝাই ট্রাক কোনোভাবে থামানো যাবে না। পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাকেও যেন কোনো ধরনের চাঁদাবাজি না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেউ চাঁদাবাজি করছে- এমন প্রমাণ বা তথ্য পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ো হবে। এমনকি চাকরি পর্যন্ত থাকবে না। গরু ব্যাপারীরা যদি কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হন, তাহলে তাদের বলব সরাসরি আমাদের জানান। হয়রানি করলে তার ভিডিও করে রাখুন এবং আমাদের দিন। আমরা কঠোর শাস্তির আওতায় আনব অভিযুক্তদের। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, আমাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেব। পুলিশের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে গরুবোঝাই ট্রাকে কোনোভাবে কেউ যেন চাঁদাবাজি করতে না পারে। এমনকি কেউ যদি পুলিশের নামেও চাঁদাবাজি করে তাদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য নির্দেশনা রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ পর্যন্ত গরু আনতে ১২টি পয়েন্টে দিতে হয় মোট ১৫ হাজার টাকা। যে ১২টি পয়েন্টে টাকা আদায় করা হয় তার মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার লিংক রোড, রামু চা বাগান, ঈদগাঁ বাজারের আগে, ডুলাহাজারা পুলিশ ফাঁড়ি, শীল ঘাটা, বাইন্নার ছড়া, আজিজনগর, দোহাজারী, পটিয়া, বেল্লাপাড়া ক্রসিং ও মইজ্জারটেক। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম-ঢাকা হাইওয়ের ১০-এর অধিক পয়েন্টে চাঁদাবাজি চলে। এ পয়েন্টগুলোতে প্রতিটি গরুবোঝাই গাড়িকে গুনতে হয় ২-৩ হাজার টাকা। একইভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল খুলনা, নেত্রকোনা, রংপুরসহ অন্যান্য জেলা থেকে গরুবোঝাই ট্রাক চট্টগ্রামে আসার পথে টাকা আদায় করছে পুলিশ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সড়কে গরুর গাড়ি দেখলেই আটকে দেয় পুলিশ ও সোর্সরা। এরপর নির্ধারিত টাকা দিলে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকা দিতে গড়িমসি করলে গরুবাহী ট্রাকটি দাঁড় করিয়ে রেখে হয়রানি করা হয়। পুলিশের চেকপোস্ট, পুলিশ ফাঁড়ি বা হাইওয়ে পুলিশ যে যার সুবিধামতো স্থানে থামিয়ে আদায় করছে টাকা।
নেত্রকোনা থেকে গরুবোঝাই ট্রাক নিয়ে নিয়মিত চট্টগ্রামে যাতায়াত করেন শেখ আলী। তিনি বলেন, নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসতে প্রতিটি গাড়িকে টাকা দিতে হয় কয়েকটি পয়েন্টে। গাড়ির কাগজপত্র, ডকুমেন্ট ও গরুর কাগজপত্র ঠিক থাকলেও টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে হয়রানি করবে, রাতে দাঁড় করিয়ে রাখবে বা মামলা দেবে। গত বৃহস্পতিবার নেত্রকোনা থেকে আসার সময় পুবাইল বিশ্বরোডের ৩০০ ফিট এলাকার চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে পুলিশ কাগজপত্র দেখতে চায়। সবকিছু ঠিক থাকার পরও ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর আগে ময়মনসিংহের শ্যামগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় দিতে হয়েছে ৫০০ টাকা। ময়মনসিংহ-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের ধর্মপাশা ও মোহনগঞ্জ সীমানা এলাকায় ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে কোনো ধরনের টাকা দিতে হয়নি ওইদিন।

কক্সবাজার থেকে গরুবোঝাই ট্রাক নিয়ে চট্টগ্রামে আসা ট্রাকচালক আবদুস সালাম। নগরের রাজাখালী এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, কক্সবাজার থেকে গরুবোঝাই ট্রাক আনতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অন্তত ১২টি পয়েন্টে টাকা দিতে হয়। বেশির ভাগ সময় পুলিশের নামে সোর্স অথবা পুলিশ নিজেই গাড়ি থামিয়ে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আদায় করছে। একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে গরুবাহী প্রতিটি ট্রাককে বিভিন্ন পয়েন্টে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা দিতে গড়িমসি করা হলে গাড়ি থামিয়ে হয়রানি ও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

ব্যাপারীরা জানান, ঈদুল আজহার চাঁদ দেখা যাওয়ার আগে থেকেই কক্সবাজার-টেকনাফ দিয়ে চট্টগ্রামে আসছে ভারতীয় ও মিয়ানমারের পশু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights