দুর্নীতির রাহুগ্রাসে বন্দি ছিল কুয়েট
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই মধ্যে তদন্তে শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতার জাল সনদ, নিয়োগকালীন বয়সের সীমাবদ্ধতা না মানা, প্রভাববিস্তার করে পদোন্নতি ও আর্থিক বড় ধরনের কেলেঙ্কারির প্রমাণ মিলেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে প্রত্যক্ষ মদদ, সাধারণ ছাত্র-শিক্ষককে নির্যাতনে যুক্ত, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি ভঙ্গের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগে সাবেক উপ-উপাচার্যসহ দুই শিক্ষক ও সাত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম সিন্ডিকেট সভায় বিভিন্ন অনিয়ম ও শৃঙ্খলাবিধি ভঙ্গের অভিযোগে সাবেক উপ-উপাচার্য মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধ্যাপক ড. সোবহান মিয়া ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধ্যাপক ড. পিন্টু চন্দ্র শীলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া সাবেক উপাচার্য মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধ্যাপক ড. মিহির রঞ্জন হালদার ও পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) ড. শিবেন্দ্র শেখর হালদার এরই মধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতির জন্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। সাবেক উপাচার্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রয়েছে। একইভাবে নিয়োগসংক্রান্ত অনিয়মে ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিমাই চন্দ্র মিস্ত্রী ও দেবাশীষ ম ল, সহকারী পরিচালক মনোজ কুমার মজুমদার, সহকারী কম্পট্রোলার জিএম আবু সাঈদ, সহকারী প্রোগ্রামার ওমর ফারুক, সহকারী টেকনিক্যাল অফিসার মেহেদী হাসান রাজন ও অফিস সহায়ক সত্যজিত কুমার দত্তকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ২১ নভেম্বর বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২৭ নভেম্বর থেকে দাপ্তরিক চিঠির মাধ্যমে বরখাস্তদের বিষয়টি জানানো হয়। জানা যায়, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ২০০৭ সালের পর থেকে কুয়েটে দুর্নীতিতে জড়িত ও অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। অধ্যাপক ড. আশরাফুল গণি ভূঁইয়াকে সভাপতি ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিছুর রহমানকে সদস্য সচিব করে ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়। তদন্তসাপেক্ষে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় সিন্ডিকেট সভায়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, বিগত দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যত ধরনের অনিয়ম হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অনেক কর্মকর্তার শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতা জাল সনদ ও নিয়োগে বয়স সীমাবদ্ধতা মানা হয়নি। অর্থ আত্মসাৎসহ অবৈধ নিয়োগে আরও অভিযোগ তদন্ত চলছে। প্রমাণসাপেক্ষে এসব ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।