নাগরিক সেবা তলানিতে
হাসান ইমন
ঝিমিয়ে পড়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। নিয়মিত ওষুধ না ছিটানোসহ মশক কার্যক্রম তদারকির অভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে ওয়ার্ডপর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদপত্র পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে জনগণকে।
যদিও এসব কাজ সম্পাদনের জন্য করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপে সব কাজ ঠিকমতো তদারকি করতে পারছেন না কর্মকর্তারা। সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন সেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই ঢাকার দুই সিটির প্রায় সব ওয়ার্ড কার্যালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকার। কাউন্সিলর না থাকায় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের নাগরিক সেবা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। একজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৯টি সাধারণ ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ তো রয়েছেই। ওয়ার্ড কার্যালয়ে এসে কেউ সনদ চাইলে তা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে স্বাক্ষর হয়ে ওয়ার্ড কার্যালয়ে সেই সনদ ফিরে যেতে কয়েক দিন লেগে যাচ্ছে। সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, জন্ম-মৃত্যু ও নাগরিকত্ব সনদ পাওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে, যিনি ওয়ার্ডের লোকজনকে চেনেন না। এজন্য একটি জন্মসনদ নিতে ১০ দিনের বেশি লেগে যাচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কালাম। তার ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। জন্মনিবন্ধন ফরম জমাও দিয়েছেন। কিন্তু কয়েকদিন লাগবে বলে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ওয়ার্ড সচিব থেকে স্বাক্ষর হয়ে আঞ্চলিক অফিসে যাবে। পরে কর্মকর্তার স্বাক্ষর হলেই মিলবে নিবন্ধন সনদ। জানতে চাইলে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে মানুষের যেন ভোগান্তি না হয় সব ধরনের কাজ আমরা করে যাচ্ছি।
মশক নিধনে অবহেলা : এখনো কমছে না ডেঙ্গুর দাপট। প্রতিদিনই মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজারো মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল ছয়জন মারা গেছেন। আর চলতি বছরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩২০ জন। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ হাজার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে সিটি করপোরেশনসহ কার্যত নাগরিক সেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুপস্থিত রয়েছেন। একই সঙ্গে মশককর্মীরা নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করছে না বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ডেঙ্গুজ্বরবাহী এডিস মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
বর্জ্য সংগ্রহে গাফিলতি : আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে গাফিলতি দেখা যায়। অনেক এলাকায় দুই থেকে তিন দিন ময়লা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, ডেমরাসহ কয়েকটি এলাকা থেকে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর ময়লা সংগ্রহে ভ্যান সার্ভিসগুলো দখলের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষজ্ঞজনের মতামতের পাশাপাশি তাদের অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। একটা নির্দিষ্ট স্থানে কী পরিমাণ কীটনাশক বা লার্ভিসাইড ছিটালে মশক নিধন হবে তা বিশেষজ্ঞ ছাড়া নিরূপণ করা কঠিন। কিংবা কীটনাশক বা লার্ভিসাইড ছিটানোর ফলে ওই স্থানে কী পরিমাণ মশক নিধন হয়েছে তার সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এসব তথ্য নির্ভুলভাবে পেতে বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে গঠিত কমিটিগুলো সহায়তা করবে। তিনি বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিয়েছি, বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে এমন কোন্দল, দখলদারিত্ব দূর করতে আমরা শক্ত অবস্থানে যাব। প্রয়োজন হলে এ সমস্যা সমাধানে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হব। তবুও কোনোভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে, বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে এলাকাভিত্তিক দখলদারিত্বের স্থান দেওয়া যাবে না। দখলবাণিজ্য ভুক্তভোগীর শিকার হচ্ছে নাগরিকরা, যা কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না।