প্রজনন মৌসুমেও বিষাক্ত বর্জ্যে বেহাল হালদা

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে এপ্রিল থেকে জুনের জোতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু প্রজনন মৌসুমের এ সময়েও বিষাক্ত বর্জ্যে নাভিশ্বাস উঠছে হালদার। ফলে দূষণ হচ্ছে পানি। তা ছাড়া ডিম ছাড়ার নির্দিষ্ট তিন মাসের ছয়টি জো’র মধ্যে পাঁচটিই শেষ। এখনো ডিম ছাড়েনি মা মাছ। বিশেষজ্ঞ ও ডিম সংগ্রহকারীরা মনে করেন, প্রজনন মৌসুমে এভাবে পানি দূষিত হওয়ায় ডিম ছাড়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে। সেই সঙ্গে হুমকিতে পড়বে মা মাছ। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যে। নষ্ট হবে নদীর পানি-পরিবেশ। ২০২০ সালে হালদার জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ রক্ষায় খাগড়াছড়ির রামগড়, মানিকছড়ি; চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান উপজেলা ও পাঁচলাইশ থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হালদা এবং এর তীরবর্তী ২৩ হাজার ৪২২ একর সীমানা বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ এলাকা ঘোষণা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাটহাজারীর বড়দিঘি এলাকার দক্ষিণ পাশে নতুন করে কিছু শিল্পকারখানা তৈরি হয়েছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তরল বর্জ্য গিয়ে পড়ছে কাটাখালী খালে, এ খালের সঙ্গে সংযুক্ত আছে ইছামতী খাল। এ ইছামতী খাল হয়ে অক্সিজেন, নতুনপাড়া, চৌধুরীহাট এবং সংলগ্ন এলাকার আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পবর্জ্য ইছামতী খাল হয়ে পড়ে কাটাখালী খালে। এ কাটাখালী খাল হয়েই বর্জ্যগুলো সরাসরি পড়ে হালদায়। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় মদুনাঘাট ওয়াপদা কলোনির স্লুইস গেটটি বন্ধ থাকে। এ সময় জোয়ারভাটার পানি চলাচল করতে পারে না। এতে পানি কুচকুচে কালো হয়ে যায়। অন্যদিকে বড়দিঘি পার হয়ে মদুনাঘাট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার জুড়ে থাকা বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি। কিন্তু দূষণের কারণে কয়েক বছর ধরে এখানকার মাচ্ছ্য বিল, কেয়াপ্রহর বিল, দখিনা বিল, জোয়ারের বিলসহ আশপাশের জলাশয়ে কোনো ধরনের ফসল রোপণ করা যায় না। অতীতে সেখানে নানা জাতের মাছ পাওয়া গেলেও এখন যায় না। তা ছাড়া, মুরগি ও গবাদি পশুর ফার্মের বর্জ্য, ছোটবড় বিভিন্ন শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যও শাখা খাল হয়ে পড়ছে হালদায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এখন যে বর্জ্যগুলো পড়ছে, সেগুলো নির্দিষ্ট কোনো এলাকার নয়। বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চলের ঘরবাড়ি, দোকান ও শিল্পকারখানর বর্জ্যগুলো বিভিন্নভাবে পচে নদীতে পড়ছে। এগুলো নির্দিষ্টভাবে বন্ধ করা কঠিন। এর জন্য প্রয়োজন হালদাপারের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সতর্ক ও সচেতন হওয়া।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, ল্যাব চলতি মৌসুমে মা মাছ ডিম ছাড়ার ছয়টি জো চিহ্নিত করে। এর মধ্যে প্রথম জো ছিল ৫ থেকে ১১ এপ্রিল, দ্বিতীয়টি ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল, তৃতীয়টি ৪ থেকে ১০ মে এবং চতুর্থটি ২০ থেকে ২৬ মে, পঞ্চমটি ২ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত। আগামী ১৯ থেকে ২৫ জুন ষষ্ঠ জো বাকি আছে। এখন শেষ জো’র অপেক্ষায় রয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। কিন্তু প্রজনন মৌসুমের এমন সময়ে বর্জ্যপানি পড়লে মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিবেশ নষ্ট হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights