বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে ক্যাবসের ১০ নির্দেশনা

অনলাইন ডেস্ক
দেশের উত্তর ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এসব এলাকার মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য খুব দ্রুত শস্য বিমা/কৃষি বিমা চালু করাসহ ১০ নির্দেশনা দিয়েছে সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিজ (ক্যাবস)।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বন্যাত্তোর কৃষি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ নির্দেশনা তুলে ধরেন।

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, দেশে যে বন্যা হয়েছে তা স্বাভাবিক বন্যা নয়, ত্রিপুরা রাজ্য থেকে পানি এসেছে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরিভাবের কারণে পরিকল্পিতভাবেই পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলের মানুষ কখনো এ রকম বন্যা দেখেনি। গোমতী নদী, পাহাড়ি নদী সেখান থেকে ঢলের পানি এসে বন্যা হলেও তা মেঘনা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যায়, খুব বেশি ক্ষতি সাধন করতে পারে না।
সাবেক এ মহাপরিচালক বলেন, ইন্ডিয়া আবারও এ রকম করবে তার জন্য আমাদের লং টার্ম ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। ক্লাইমেট চেঞ্জের মেডিটেশন অ্যান্ড অ্যাডাপটেশনের দিকে নজর দিতে হবে। হয়তো আবারো ওই এলাকায় বন্যা হতে পারে।

প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়ে ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, কৃষি খাতে রবি ফসল উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। যারা ক্ষুদ্র কৃষক তাদের দিকে বিশেষ নজর দিয়ে সহায়তা ও স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। লাইভস্টক পোল্ট্রি ক্ষুদ্র খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে আবার কৃষি ক্ষেত্রকে দাঁড় করাতে হবে। ফিশার সেক্টরেও প্রণোদনা দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সরকারের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। এছাড়া বন্যায় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, দূষণ ধুয়ে যাওয়ার ফলে মাটির গুণাগুন বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে রবি ফসল উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।

এ সময় মূল প্রবন্ধে সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিসের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ১০ নির্দেশনা তুলে ধরেন।

১. বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি ফসলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার অব্যবহিত পরে রোপা আমনের বীজতলা, রোপিত আমন ও দণ্ডায়মান আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি নিরূপণ পূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন কাজ শুরু করতে হবে।

২. আগাম শীতকালীন শাক-সবজি, ডাল ফসল, তেল ফসলসহ অঞ্চল উপযোগী ফসল চাষের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে।

৩. বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নিজস্ব উঁচু জমিতে নাবি জাতের আমনের বীজতলা, পলি ব্যাগে অথবা বেডে বিভিন্ন সবজি, চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের উপকরণ মান সম্পন্ন বীজ, সার, বালাইনাশক ইত্যাদি সরবরাহ ও ব্যবহারের দিক-নির্দেশনাসহ জরুরি পুনর্বাসন কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।

৫. মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ পূর্বক দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. অসুস্থ গবাদিপশু ও হাস-মুরগির জরুরি চিকিৎসাসেবা এবং খাদ্য সরবরাহ স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরসমূহের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।

৭. বন্যা দুর্গত এলাকায় রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, আবাসন তৈরি ও মেরামত সংক্রান্ত পুনর্বাসন কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ পূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন ও মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮.স্বাস্থ্যসেবা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ পূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন ও সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

৯. কৃষকদের শস্য ঋণের/কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ঋণগ্রস্তদের ঋণ মৌকুফ অথবা ঋণের কিস্তি মৌকুফ করতে হবে।

১০. খুব দ্রুত শস্য বিমা/কৃষি বিমা চালু করতে হবে।

এ সময় সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিসের চেয়ারম্যান কৃষি অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোশাররফ হোসেন, ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ, পিকে এস এফের ডিএমডি ড. ফজলে রাব্বি সাদেক প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights