বিক্ষোভে আরও ৭০ কারখানা বন্ধ

প্রতিদিন ডেস্ক
বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেতন বৃদ্ধি, সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ, নারী শ্রমিকের সমান সংখ্যক পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ দাবিতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর, ভোগড়া বাইপাস, বাঘের বাজার ও বাসন এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এ ছাড়া শ্রীপুরে আরএকে সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এদিকে, আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের মুখে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রায় ৭০ তৈরি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া রংপুর চিনিকল চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। এসব এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

গাজীপুর : বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ইউনি হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামের একটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। সকাল ৯টা থেকে কয়েকজন কর্মকর্তার পদত্যাগ নিশ্চিত করা, শ্রমিক ইউনিয়ন বাস্তবায়ন, বার্ষিক বেতন সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি, আন্দোলনরত কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত ও হয়রানি না করা, ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ২০ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করেছেন শ্রমিকরা। এ ছাড়া, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্ট লিমিটেডের সামনে চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমিকেরা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যায়। এদিকে, শ্রমিক নিয়োগে নারী পুরুষের বৈষম্য রোধে বাসন এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, চাকরিতে পুরুষদের চাইতে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তারা এ ধরনের বৈষম্য চান না। দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যায়।

সাভার (ঢাকা) : আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের মুখে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রায় ৭০ তৈরি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে অবস্থিত এসব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। শিল্প পুলিশ জানায়, সকালে যথা নিয়মে কারখানায় শ্রমিকরা এসে কাজ না করে বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ শুরু করলে কর্তৃপক্ষ একের পর এক কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। পরে শ্রমিকরা বেরিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা কারখানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে সেসব কারখানাতেও ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অন্তত শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ছোট-বড় অন্তত ৭০টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। জিরাবো এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হলেও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন শ্রমিকরা। এতে করে সড়কটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা। অন্যদিকে সকালের দিকে সাভার আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার নাবা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, পলাশবাড়ী এলাকার জিএবি (গিল্ডান) বন্ধ থাকতে দেখা যায়। নরসিংহপুর এলাকায় নাসা গ্রুপের শ্রমিকেরা কারখানায় এলেও কাজ শুরু না করায় ছুটি দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। একই এলাকার অনন্ত গার্মেন্টসের শ্রমিকদের কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। শিমুলতলা এলাকায় কাজ শুরুর দাবিতে বন্ধ থাকা দি ড্রেস অ্যান্ড দি আইডিয়াস নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা কারখানার মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। শ্রমিক শাহিদা বেগম বলেন, শনিবার পাঁচজনকে চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ। পরদিন থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ট্রাকে করে কারখানা থেকে মালামাল সরিয়ে ফেলছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কারখানার মালিক হোসেইন বিন এম এ খালেক বলেন, আপৎকালীন জানমালের নিরাপত্তার জন্য কারখানা বন্ধ রয়েছে। একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকা পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে অন্তত ৭০টি কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে।

শ্রীপুর (গাজীপুর) : শ্রীপুরে প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিকের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। সকাল ৭টায় তারা কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে বেলা ১১টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

শ্রমিকরা জানান, কারখানায় কর্মরত ভারতীয় কর্মকর্তারা তাদের মূল্যায়ন করেন না, ভালো কোনো ব্যবহার তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। তারা দায়িত্বে আসার পর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ ছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী শ্রমিক ও বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। এসব বিষয়টি নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একাধিকবার কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সমাধানে আসেননি। গাইবান্ধা : জেলার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকল চালু ও বকেয়া টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে গতকাল সকাল ১১টায় উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকল প্রাঙ্গণে শ্রমিক-কর্মচারী, আখচাষি ও ছাত্র-জনতার উদ্যোগে বিক্ষোভ এবং পরে মানববন্ধন করা হয়। ছাত্র নেতা মোফাজ্জল হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচি ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক নেতা আবু সুফিয়ান সুজা, মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল, ফারুক হোসেন ফটু, আখচাষি নেতা আতোয়ারুল ইসলাম নান্নু, শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম, ছাত্র নেতা নূর আলম ও নূরে আলম সিদ্দিক প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights