যুক্তরাজ্যের নতুন ফার্স্ট লেডি ইহুদি বংশোদ্ভূত ভিক্টোরিয়া

অনলাইন ডেস্ক
ভিক্টোরিয়া স্টারমার, যুক্তরাজ্যের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের স্ত্রী। পেশায় তিনি একজন জনস্বাস্থ্য কর্মী।

দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে প্রচারমাধ্যম থেকে দূরে রেখে কাজ করে আসছেন ভিক্টোরিয়া স্টারমার। বলা যায়, জনসম্মুখে একেবারে দেখাই যায় না তাকে। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায়ও তিনি ছিলেন প্রায় অদৃশ্য।

কিন্তু এখন যুক্তরাজ্যের মানুষ ধীরে ধীরে পরিচিত হতে চলেছেন ৫০ বছর বয়সী এই নারীর সঙ্গে, যিনি লেবার পার্টির প্রধান এবং ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছেন।
২০২০ সালে কিয়ার স্টারমার লেবার পার্টির নেতা হওয়ার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া স্টারমার জনসমক্ষে আসা থেকে বিরত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কোনও সাক্ষাৎকার দেননি এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও খুব কম অংশ নিয়েছেন।

তার জনসমক্ষে আসার ঘটনা হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। এর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনের দিনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া, উইম্বলডন টেনিস টুর্নামেন্টের স্ট্যান্ডে, টেলর সুইফটের লন্ডন কনসার্টে এবং বাকিংহাম প্যালেসে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে ও অভ্যর্থনায় অংশ নেওয়া।

এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল ২০২৩ সালে লেবার পার্টির বার্ষিক সম্মেলন। ওই সময় তিনি লেবার পার্টির দলীয় রঙের সঙ্গে মিল রেখে লাল পোশাক পরে স্বামীর সঙ্গে মঞ্চে যোগ দেন।

ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করার পরও সাবেক আইনজীবী ভিক্টোরিয়া স্টারমার এনএইচএস-এ কর্মজীবন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

ভিক্টোরিয়া আলেকজান্ডার উত্তর লন্ডনে বড় হয়েছেন। তার বাবা একজন সাবেক হিসাবরক্ষক এবং পোলিশ-ইহুদি বংশোদ্ভূত এবং মা ছিলেন একজন কমিউনিটি ডাক্তার।

তিনি ওয়েলসের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান ছিলেন। এরপর তিনি টনি ব্লেয়ারের অধীনে লেবার দলের প্রচারণা কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। পরে একটি আইন সংস্থায় সলিসিটার হন। এরপর তিনি এনএইচএস-এ যোগ দেন।

নতুন প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রথম সাক্ষাতের গল্প বহুবার বলেছেন। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে একটি মামলা নিয়ে কাজ করার সময় তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। ওই সময় কিয়ার স্টারমার প্রথমবার তাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তার প্রস্তুত করা সব নথি সঠিক কি না। এরপর তিনি ক্যামডেনে একটি পাব-এ ডেটে যাওয়ার প্রস্তাব দেন।

২০০৭ সালে এই দম্পতি বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে–১৬ বছর বয়সী একটি ছেলে এবং ১৩ বছর বয়সী একটি কন্যা। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কিয়ার স্টারমার জনসমক্ষে কখনও তাদের নাম উল্লেখ করেন না। তারা উত্তর লন্ডনের ক্যান্টিশ টাউনে বসবাস করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি ধার্মিক নন। তবে তার স্ত্রী তাদের সন্তানদের ইহুদি ঐতিহ্য শিখিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সিনাগগে যাওয়া এবং শুক্রবার রাতের খাবারের আয়োজন।

‘ভিক’-কে নিয়ে সবসময় প্রশংসার ঝাঁপি খোলেন কিয়ার স্টারমার। তিনি ভোগ ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন, তার স্ত্রী ‘খুব দৃঢ় ও বাস্তববাদী’। আরেকটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ভিকির বর্তমান কাজ তাকে প্রতিদিন এনএইচএস-এর চ্যালেঞ্জ ও কর্মীদের মনোবল সম্পর্কে সরাসরি ধারণা দেয়।

তাদের একজন পারিবারিক বন্ধু একবার বলেছিলেন, ভিক্টোরিয়া তার স্বামীকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং ‘তাদের ব্যক্তিত্ব একে অন্যের থেকে আলাদা হলেও তা তাদের বন্ধনকে শক্তিশালী করেছে।

বহু লেবার উপদেষ্টা ভিক্টোরিয়াকে তার স্বামীর জন্য একটি সম্পদ হিসেবে দেখেন। তবে তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় মিডিয়া থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন।

কিয়ার স্টারমার বলেছিলেন, ভিক্টোরিয়া ছেলের প্রতি মনোযোগ দিতে চেয়েছিলেন। এ বছর স্কুলে ছেলের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা রয়েছে। কিন্তু গত মাসে একটি মামলায় তার সাক্ষ্য আদালতে উল্লেখ করা থেকে তিনি সংবাদমাধ্যমকে থামাতে পারেননি। তিনজন ফিলিস্তিনিপন্থী কর্মী গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে লেবার দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে তাদের পরিবারের বাড়ির সামনে প্রতিবাদ করার জন্য বিচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন।

ওই সময় ভিক্টোরিয়া বলেছিলেন, সত্যি কথা বলতে আমি কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলাম। আমি উদ্বিগ্ন ও অস্বস্তি বোধ করছিলাম।

লেবার নেতা বলেছেন, ডাউনিং স্ট্রিটে পরিবারের সন্তানদের মিডিয়ার আলো থেকে দূরে ও সুরক্ষিত রাখতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, ডেইলি মেইল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে, স্কাই নিউজ, ভোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights