সিআইডির জালে দিলীপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে সোনা ও হীরা চোরাচালান এবং অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়ায় গতকাল থেকে তদন্ত শুরু করে।

সিআইডি জানিয়েছে, চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার, প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুম দিয়েছে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এসব শোরুমে প্রকৃত ডায়মন্ডের বদলে উন্নত মানের কাচের টুকরোকে প্রকৃত ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রি করে আসছেন। তিনি দুবাই-সিঙ্গাপুরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। ভারতের কলকাতায় দিলীপের তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার তথ্য পেয়েছে সিআইডির দল। ইতিপূর্বে দুদকের অনুসন্ধানে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যের কারণে দুদক আর বেশিদূর এগোতে পারেনি। জানা যায়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়াল বিদেশ থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানি করে হুন্ডির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং শুল্ক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে তার অবৈধ কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। মেসেনটেট নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বিক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তথাকথিত হীরা বানিয়ে তা অলংকার হিসেবে বিক্রির প্রতারণা চালানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কিছু দিন ব্যবহারের পর এগুলো কালো হয়ে যায়। সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, মিরপুরসহ প্রায় ১০০টির কাছাকাছি শোরুম অল্প কয়েক দিনের মধ্যে স্থাপন করেন। তিনি কুষ্টিয়ার মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা।

দুদকে করা ওই অভিযোগে বলা হয়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী দিলীপ আগরওয়ালা বিদেশ থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানি করে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। দুদকের এক সহকারী পরিচালক জানান, দুদক টিম অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণাদি হাতে নিয়ে দিলীপ আগরওয়ালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে একাধিকবার তলবও করে। অনুসন্ধানকালে তার দুর্নীতির সব দিক খতিয়ে দেখেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
শুরুতে ঢাকার বিজয়নগরে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিজের অফিস করতেন এবং পাশের মহল্লায় দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। তবে ওই সময় ঢাকায় দিলীপ কুমার কীসের ব্যবসা করতেন তা তার ঘনিষ্ঠজনরাও কেউ কিছু বলতে পারেননি। কিন্তু দুই দশকের ব্যবধানে দিলীপ আগরওয়ালা এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক, চুয়াডাঙ্গায় আসেন হেলিকপ্টারে চড়ে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেই সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হবেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পোস্টার এবং বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পোস্টারের সঙ্গে নিজের ছবি ছেপে চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে প্রচার করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights