সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বড় আক্রমণ: আসাদ সরকারের পতন হবে?

সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্ববৃহৎ হামলা চালিয়েছে। বিদ্রোহীরা সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা অর্ধশতাধিক শহর ও গ্রাম দখলের পর সিরিয়ার ঐতিহাসিক আলেপ্পো শহরের পশ্চিমাঞ্চল দখল করে নিয়েছে। সিরিয়ার যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা জানায়, এটি গত চার বছরে আসাদ ও তার মিত্র রাশিয়া-ইরানের জন্য প্রথম বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

বুধবার ইদলিব অঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে এই হামলা শুরু হয়। প্রথম দুই দিনের লড়াইয়ে ২৭৭ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৮ জন বেসামরিক নাগরিক, যাদের বেশিরভাগই রুশ বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বাহিনী কোনো প্রতিরোধ না করে অনেক এলাকা ছেড়ে সরে গেছে।

বাশার আল-আসাদের সরকার এবং তার মিত্র রাশিয়া বিদ্রোহীদের দখল করা অঞ্চলসহ অন্যান্য বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে।

আসাদ সরকার গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন শুরু করলে ২০১১ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। বিদ্রোহীরা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। এ সময় জিহাদি গোষ্ঠীগুলোও সংঘাতে যুক্ত হয়। এর মধ্যে হায়াত তাহরির আল-শাম, যেটি আগে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিল, প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্র একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।

সাম্প্রতিক বিদ্রোহীদের এই অগ্রযাত্রা এবং আসাদ সরকারের পাল্টা জবাব সিরিয়ার পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। আলেপ্পোর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়ে লড়াই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রথম দিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অগ্রসর হতে থাকলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার শাসন টিকিয়ে রাখতে মিত্রদের সহযোগিতা নেন। ইরান, আসাদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র, যুদ্ধের শুরু থেকেই তাকে সমর্থন দিয়ে আসছে। টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান তার সেনা উপদেষ্টা, অস্ত্র, বিপুল অর্থ এবং সেনা মোতায়েন করে আসাদের শাসন রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।

ইরান সমর্থিত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ২০১২ সাল থেকেই আসাদের সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে রাশিয়া সিরিয়ার সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে সরাসরি সামরিক সহায়তা প্রদান শুরু করে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ায় রুশ বিমানবাহিনী এবং স্থলসেনা মোতায়েন করেন। এটা আসাদের শাসনকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে।

তুরস্ক, আসাদের শাসনের বিরোধিতা করে, বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়। তারা সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে কুর্দি ওয়াইপিজি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তুরস্কের মতে, ওয়াইপিজি নিষিদ্ধ কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি শাখা।

ইরান ও রাশিয়ার সমর্থনে আসাদ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের গতি বদলে দেন এবং বড় বড় শহর পুনর্দখল করেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে রাশিয়া ও তুরস্ক ইদলিব অঞ্চলে সংঘর্ষ থামাতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেন।

জাতিসংঘের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশকের এই গৃহযুদ্ধে প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সিরিয়ার সংঘাত এখনো মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মানবিক সংকট হিসেবে রয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights