অগ্নিকাণ্ডের পর জনশূন্য ময়দান সচিবালয়
ওয়াজেদ হীরা
স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে প্রশাসনের হৃৎপিণ্ড সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। উপদেষ্টা, সচিব ও বিভিন্ন সংস্থাপ্রধানের গাড়ি ছাড়া অন্যদের গাড়ি প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়া সচিবালয়ে নেই সাধারণ দর্শনার্থী। এ ছাড়া সব সময় গাড়ির ভিড়ে ঠাসা সচিবালয় একদম ফাঁকা। দেখলে মনে হয় যেন জনশূন্য এক ময়দান।
২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে আগুন লাগার পর দিন থেকে সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী পাস ছাড়া অন্যদের প্রবেশ অনেকটাই সীমিত করা হয়েছে। সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রবেশও অনেকটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থী নেই বললেই চলে। যারা বিভিন্ন মিটিং করতে সচিবালয়ে আসেন তাদেরও সংখ্যাটা কমিয়ে আনা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ নম্বর গেট দিয়ে হেঁটে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। সীমিতসংখ্যক সাংবাদিক ১ ও ২ নম্বর ভবনের মাঝখানের দর্শনার্থী কক্ষ দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। দর্শনার্থী ও গাড়ি প্রবেশ বন্ধ থাকায় ভিন্নরকমের মনে হয় জমজমাট থাকা সচিবালয়কে। সকালে সচিবালয়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ রুমে প্রবেশের পর করিডোর থাকে একেবারে ফাঁকা। অথচ কয়েক দিন আগেও মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি বারান্দায় যেন মানুষের ভিড় লেগে থাকত।
তদন্তকারী দলের বাইরে পুড়ে যাওয়া ভবনগুলোয় অনুমতি নিয়ে ঢুকে ক্ষতিপূরণ হিসাব করছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ অনুমতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে পোড়া ভবনে অন্য কারও যাওয়ার অনুমতি নেই। সচিবালয় নিরাপত্তা শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, সচিবালয়ে এখনো কড়াকড়ি আরোপ রয়েছে। এটা কতদিন থাকবে তা কর্তৃপক্ষের বিষয়। পোড়া ভবনে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর উপদেষ্টা-সচিবসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় অফিস করছেন। গতকাল খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম দিনে প্রবেশে কঠোরতা দেখা গেছে। তবে প্রথম দিনে বর্ষবরণের আমেজ ছিল কর্মকর্তাদের মধ্যে। যারা সচিবালয়ে এসেছেন তারা সহকর্মীদের সঙ্গে নতুন বছরের (২০২৫) শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বছর উপলক্ষে মিষ্টিমুখ করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একই রকম শাড়ি পরে অফিসে আসেন। অনেক উপদেষ্টা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ইতোমধ্যে সচিবালয়ে অগ্নিকাে র ঘটনায় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অগ্নিকাে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বৈদ্যুতিক ‘লুজ কানেকশনের’ (দুর্বল বিদ্যুৎসংযোগ) কারণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতের আগুনে একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখানে যুব ও ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, সড়ক ও যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অফিস ছিল।