অপ্রতিরোধ্য অপহরণকারী
কক্সবাজার প্রতিনিধি
র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান ও টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে হ্নীলার জাদিমোরা পাহাড়ে অভিযান চালিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সোমবার সকাল ১০টার দিকে জাদিমোরা পাহাড়ে বন বিভাগের হয়ে গাছের চারা রোপণের কাজ করার সময় অস্ত্রের মুখে শ্রমিকদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণের শিকার শ্রমিকদের পরিবারের কাছে জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। বন বিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, বন বিভাগের হয়ে কাজে নিয়োজিত ছিলেন ওই শ্রমিকরা। অপহরণের খবর পেয়ে পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব, বন বিভাগের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন পাহাড়ে অভিযান শুরু করেন। এদিকে টেকনাফে ফের এক দোকানদারসহ ৯ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে দুই দিনে ২৮ জনকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত ১১টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ায় ফাঁকা গুলি করে জসিম উদ্দিন নামে এক মুদি দোকানদারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। অপহৃত মুদির দোকানদার বাহারছড়া বড় ডেইল ৮নং ওয়ার্ড এলাকার নাজিম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৫)। স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, জসিম উদ্দিন বড় ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাছে নিজের দোকানে ছিলেন। রাত ১১টায় হঠাৎ ২০-৩০ জন অস্ত্রধারী পাহাড়ি সন্ত্রাসী তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় লোকজন বাধা দিলে একাধিক ফাঁকা গুলি করে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। জসিমের বড় ভাই মৌলানা জামাল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাতে হঠাৎ স্থানীয় ও রোহিঙ্গা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দোকানে এসে আমার ভাইকে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে তুলে নিয়ে যায়। প্রত্যেকের হাতে একটি করে অস্ত্র ছিল। ্এদিকে টেকনাফে হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়ক থেকে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ আটজন অপহরণের শিকার হয়েছেন। তবে অপহৃতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন শামলাপুর সিএনজিচালিত অটোরিকশার লাইনম্যান মো. আবদুর রহিম। তিনি বলেন, সকাল ৮টার দিকে হোয়াইক্যং থেকে আসা শামলাপুরগামী দুটি অটোরিকশা হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে পৌঁছলে ঢালা থেকে ডাকাতদলের সদস্যরা দুই অটোরিকশার চালকসহ আটজনকে অপহরণ করেছে বলে জানা গেছে। বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শোভন কুমার শাহা বলেন, হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে দুই সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে চালকসহ যাত্রী অপহরণের ঘটনা শুনে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। অপহৃতদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছি। কতজন অপহরণ হলেন সেটার সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। অটোরিকশা দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
তাদের মধ্যে ৯৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
টেকনাফ থানার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ১৪টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৬৫ জন। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনকে।